কলকাতা। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বড় রায় দিল। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং ক্ষমতার পৃথকীকরণের মৌলিক নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে সংসদে পাস হওয়া ‘ট্রাইবুনাল রিফর্মস অ্যাক্ট, ২০২১’-কে সরাসরি বাতিল করল শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই গবাই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ এই আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করেছে।
বেঞ্চ জানায়, যে ধারাগুলি এই আদালত অতীতে বাতিল করেছিল, কেন্দ্র সেগুলিকে ‘সামান্য বদলে আবার ফিরিয়ে এনেছে’। আদালত একে “সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পাশ কাটানোর এক উদ্বেগজনক প্রয়াস” আখ্যা দিয়ে কেন্দ্রের প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে।
আইনের বিতর্কিত দিকগুলি:
সুপ্রিম কোর্টের মতে, এই আইনের বিতর্কিত বিধানগুলি ট্রাইবুনালের কর্মদক্ষতা এবং স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। এই বিধানগুলির মধ্যে ছিল:
-
সদস্যপদে নিয়োগের ন্যূনতম বয়স ৫০ বছর নির্ধারণ করা।
-
কার্যকাল কমিয়ে মাত্র চার বছর করা।
-
সার্চ-কম-সিলেকশন কমিটি–কে মাত্র দু’জন প্রার্থীর নাম পাঠানোর অনুমতি দেওয়া, যাঁদের মধ্য থেকে সরকার একজন বেছে নেবে (যা ‘চেরি-পিকিং’-এর সুযোগ তৈরি করে)।
আবেদনকারী মাদ্রাজ বার অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছিল, প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আইবি (IB)-র গোপন রিপোর্টের ভিত্তিতে উচ্চস্থানীয় যোগ্যদের বাদ দেওয়া হচ্ছে এবং ওয়েটলিস্ট থাকা প্রার্থীদের সুপারিশ করা হচ্ছে।
ট্রাইবুনালের স্বাধীনতা কেন জরুরি?
ট্রাইবুনাল শুধু বিকল্প বিচারমঞ্চ নয়—এখানে কোটি টাকার ট্যাক্স-বিতর্ক, কোম্পানি আইন, পরিবেশ ছাড়পত্র এবং সেনা-অধিকারিকদের সার্ভিস-সংক্রান্ত সংবেদনশীল মামলার নিষ্পত্তি হয়। সুপ্রিম কোর্ট বহুবার স্পষ্ট করেছে যে, ট্রাইবুনালের স্বশাসন ক্ষমতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ।
রায়ে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল, বিচারবিভাগের স্বাধীনতার ওপর কোনওরকম নির্বাহী চাপ বা বিধানগত ওভাররাইড বরদাস্ত করা হবে না। ট্রাইবুনাল নিয়োগপ্রক্রিয়া অবশ্যই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে হবে—এটাই সংবিধানের প্রত্যাশা।