হরিয়ানার তরুণী টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব খুনে তাঁর বাবা দীপক যাদব গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই নতুন তথ্য সামনে আসছে। বন্ধুদের দাবি, রাধিকার জীবনে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ এতটাই বেশি ছিল যে, সেই ‘স্বাধীনতা হরণই’ তাঁর জীবন কেড়ে নিল। বন্ধুদের অভিযোগ, রাধিকার বাবা তাঁর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত এই মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনে।
রাধিকার বন্ধু হিমাংশিকা সিংহ রাজপুত সমাজমাধ্যমে একটি আবেগঘন পোস্টে লিখেছেন, রাধিকা কী পরবেন, কী খাবেন, কোথায় যাবেন, কাদের সঙ্গে কথা বলবেন – সবকিছুই নাকি তাঁর বাবা-মা নিয়ন্ত্রণ করতেন। হিমাংশিকা অভিযোগ করে বলেন, “আমার বন্ধুকে ওর বাবা মেরে ফেলল। পাঁচটি গুলি করা হয়েছে, চারটি গুলি লেগেছে রাধিকার। বন্ধুর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল ওর বাবা। রাধিকার জীবনে স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। সর্ব ক্ষণ ওকে অপমান সহ্য করতে হত।”
হিমাংশিকার দাবি, রাধিকা সব সময় নিজের কিছু করতে চাইতেন। টেনিসে চোট পাওয়ার পর খেলা ছেড়ে দিলেও তিনি প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। বহু ছেলেমেয়ে তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। আর রাধিকার এই সাফল্যই নাকি তাঁর বাবা দীপক মেনে নিতে পারছিলেন না। হিমাংশিকার অভিযোগ, বাবা দীপক রাধিকার কথা না শুনে কিছু ‘মন্দ বন্ধুদের’ কথা শুনে রাধিকাকে নানাভাবে হেনস্থা করা শুরু করেন। তাঁর কথায়, “রাধিকার বাড়ির পরিবেশ ছিল অন্য রকম। ছোট পোশাক পরা যাবে না। কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলা যাবে না— এ রকম হাজার বিধিনিষেধ ছিল।”
শুধুমাত্র হিমাংশিকা নন, রাধিকার বাড়ির এই কড়া পরিবেশ ও বিধিনিষেধ নিয়ে অন্যান্য বন্ধুদের কণ্ঠেও একই সুর শোনা গেছে। হিমাংশিকা আরও জানান, “নিজের অ্যাকাডেমি খোলার জন্য খুব পরিশ্রম করত রাধিকা। পরিশ্রম করে টেনিসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এত ভাল কাজ করছিল, সেটা সহ্য হলো না ওর পরিবারের। ‘মেয়ে হয়ে এত স্বাধীনতা কিসের’— এই ধরনের মনোভাব ছিল ওর পরিবারের।”
হিমাংশিকা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০১২-১৩ সাল থেকে তাঁরা দুজন একসঙ্গে খেলা শুরু করেন, একসঙ্গে টুর্নামেন্টে যেতেন, ঘুরতে যেতেন। রাধিকা ছিলেন অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল। কিন্তু পরিবারের কড়া নজরদারির কারণে তিনি বাইরের কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেন না। হিমাংশিকা বলেন, “ওর প্রতি পদক্ষেপের উপর নজরদারি চলত। এমনকি কোন বন্ধুকে ভিডিও কল করছে, সেটাও ওর বাবা-মাকে দেখাতে হত। রাধিকা ছবি তুলতে, ভিডিও বানাতে খুব ভালবাসত। কিন্তু বাড়ির চাপে সেগুলিও বন্ধ করে দিয়েছিল।”
এই ঘটনাটিকে অনেকে ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুন বলে দাবি করলেও, হিমাংশিকা এই বিষয়টিকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অনেকেই এটিকে ‘লভ জিহাদ’-এর তকমা দিতে চাইছেন? কিন্তু তাঁরা এর প্রমাণ দিতে পারবেন কি? রাধিকা কারও সঙ্গে খুব বেশি কথা বলত না। নিজেকে সব সময় আলাদা করে রাখত। কারণ, বাড়ির লোকেরাই ওর স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল।” পুলিশও পরিষ্কার জানিয়েছে, এটি কোনও ‘লভ জিহাদ’-এর ঘটনা নয়।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন রাধিকা। তাঁকে গুলি করে খুন করার অভিযোগে বাবা দীপক যাদবকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আদালত তাঁকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। রাধিকার খুনে তাঁর ভাইঝির ফাঁসি চেয়েছেন দীপকের ভাই অর্থাৎ রাধিকার কাকা। এই ঘটনায় পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং চরম রক্ষণশীল মনোভাবের বিষয়টি সামনে এসেছে, যা সমাজের বুকে এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।