উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম— সারা ভারতবর্ষের সব ধর্ম এবং সব ভাষাভাষী মানুষের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র হলো পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলের প্রবেশদ্বার খড়গপুর। মেদিনীপুর জেলার এই ছোট্ট শহরটি আজ কেবল একটি জনপদ নয়, বরং ‘ভারতবর্ষের ক্ষুদ্র সংস্করণ’ বা ‘মিনি ইন্ডিয়া’ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। কিন্তু কেন এই শহরটি এমন অনন্য তকমা পেল? তার ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয়।
ইতিহাসের পাতায় বি এন আর (BNR): গবেষকদের মতে, খড়গপুরের এই বৈচিত্র্যের মূলে রয়েছে রেলপথ। কয়েক দশক আগে ‘বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে’ (BNR)-কে কেন্দ্র করে এখানে কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হয়। সেই চাকরির সুবাদেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমান এখানে। পূর্বপুরুষদের সেই ধারা আজও বহন করে চলেছে বর্তমান প্রজন্ম। কেউ উত্তর ভারত থেকে এসেছেন, কেউ দক্ষিণ ভারত থেকে, আবার কেউ ওড়িশা বা পশ্চিম ভারত থেকে। খড়গপুর যেন এক বহুভাষিক সংস্কৃতির জীবন্ত সংগ্রহশালা।
সংস্কৃতির মেলবন্ধন: খড়গপুরের অলিগলি ঘুরলে আপনি একই সঙ্গে অনুভব করবেন সারা ভারতকে। এখানে যেমন ধুমধাম করে পালিত হয় ওড়িয়া রীতির অনুষ্ঠান, তেমনই দক্ষিণী ঢঙে আয়োজিত হয় পোঙ্গল। আবার কোথাও রামনবমী বা মাতা পুজোর জাঁকজমক। বাংলা সংস্কৃতি তো বটেই, তার সঙ্গে মিশে গেছে ভিন্ন ভিন্ন রুচি ও রীতিনীতি। মূলত রেল কলোনিগুলোকে কেন্দ্র করেই এই মিশ্র সংস্কৃতির ধারা গড়ে উঠেছে।
আধুনিক খড়গপুর ও বৈচিত্র্য: কেবল রেলপথ নয়, খড়গপুরের পরিচিতি আজ বিশ্বজুড়ে। এখানে রয়েছে এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এবং প্রখ্যাত প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur)। এছাড়াও রয়েছে বায়ুসেনার গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি, বিশাল মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের মানুষ আইআইটি বা রেলের কাজে এখানে এসে পাকাপোক্তভাবে বসতি স্থাপন করেছেন।
খড়গপুর শহরটি প্রমাণ করে দেয় যে, ভাষা ও ধর্ম আলাদা হলেও সম্প্রীতির বাঁধনে এক হয়ে থাকা সম্ভব। জঙ্গলমহলের এই ছোট্ট শহরটি আজও ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসের সেই ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বৈচিত্র্যের মাঝেও লুকিয়ে রয়েছে এক অখণ্ড ঐক্য।