বাংলায় প্রায় দুই দশক পর ভোটার তালিকা যাচাই, বাড়ছে রাজনৈতিক চাপানউতোর

দীর্ঘদিনের জল্পনা ও রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জাতীয় নির্বাচন কমিশন দেশজুড়ে সমস্ত রাজ্যে ‘সিস্টেমেটিক আইডেন্টিফিকেশন অব রেজিস্টার্ড ইলেক্টরস’ (SIR) বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা পরিচালনার স্পষ্ট নির্দেশ জারি করেছে। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে এই সিদ্ধান্তের জেরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হতে চলেছে।

ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) প্রথম থেকেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে SIR হবে বলে জানিয়ে আসছিল, অন্যদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এসআইআরকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের নির্দেশে কাজ করছে। এমনকি এসআইআর নিয়ে সংসদেও বিভিন্ন বিরোধী দল সরব হয়েছিল।

২০০২ সালের ভোটার তালিকা ভিত্তি, বিহার মডেলে সমীক্ষা:

প্রায় দুই দশক পর পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা শুরু হতে চলেছে। সোমবার রাজ্যের ২০০২ সালের ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দফতর। ইতিমধ্যে বাংলার ১১টি জেলার শতাধিক বিধানসভা কেন্দ্রের পুরনো তালিকা সিইও-র ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।

কমিশন সূত্রের খবর অনুযায়ী, ২০০২ সালের এই তালিকাকে ভিত্তি করেই রাজ্যে নতুন করে ভোটার যাচাই প্রক্রিয়া চালানো হবে। নির্বাচন কমিশনের অন্দরের একাংশ মনে করছে, ২০০৩ সালে বিহারে যেভাবে এসআইআর হয়েছিল এবং বর্তমানে যেভাবে ওই রাজ্যে পুনরায় ভোটার যাচাই প্রক্রিয়া চলছে, পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় সেই একই মডেলে কাজ শুরু হবে।

ঘরে ঘরে যাবেন আধিকারিকরা, নথিপত্রের কড়াকড়ি:

কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটার তালিকার যাচাইয়ের জন্য মাঠে নামবেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক (DEO), অতিরিক্ত জেলাশাসক, ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO), অতিরিক্ত ইআরও এবং বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO)। তাঁরা প্রতিটি ভোটারের বাড়িতে গিয়ে ফর্ম পূরণ করিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবেন। এরপর নথি যাচাই করে তৈরি হবে সংশোধিত ভোটার তালিকা।

এই প্রক্রিয়ায় কিছু ক্ষেত্রে নথির প্রয়োজনীয়তা কম থাকবে। যেমন, যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল, তাদের অতিরিক্ত কোনো কাগজ দেখাতে হবে না। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রেও, যদি অভিভাবকের নাম ওই তালিকায় থেকে থাকে। তবে নতুন ভোটার, অন্য রাজ্য থেকে আসা ব্যক্তি অথবা যাদের নাম সেই পুরনো তালিকায় নেই, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি নথি ও আলাদা ফর্ম জমা দিতে হবে। এই যাচাইয়ের মধ্যে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এবার থেকে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইনেও সম্পন্ন করা যাবে। প্রতিটি বুথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

বিহারের উদাহরণ ও বাংলার ভবিষ্যৎ:

প্রসঙ্গত, বিহারে ইতিমধ্যে জুন মাস থেকে এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে এবং ১লা আগস্ট সেই রাজ্যের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশিত হবে। জানা গেছে, বিহারে এখনও পর্যন্ত ৬০ লক্ষেরও বেশি ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। বাংলায় ঠিক কত পরিমাণ নাম বাদ পড়বে, তা এখনই বলা না গেলেও, কমিশনের এই পদক্ষেপ ঘিরে প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। রাজ্য রাজনীতিতে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy