গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক এক বছর পূর্তির দিনে বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মহম্মদ হারুন-আর-রশিদকে চট্টগ্রামের একটি হোটেল কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার আকস্মিক মৃত্যু ঘিরে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য এবং রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ডেস্টিনি গ্রুপ, যার সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন, তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
৭৭ বছর বয়সী এই প্রাক্তন সেনাপ্রধানকে সোমবার চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি কক্ষে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি রবিবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন একটি মামলার শুনানিতে অংশ নিতে। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় এবং তার ফোন বন্ধ থাকায় ডেস্টিনি ক্লাবের কর্মকর্তারা তার কক্ষে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তার দেহ চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (CMH) পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের (ব্রেইন হ্যামারেজ) কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিতভাবে জানা যাবে না।
উল্লেখ্য, ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-আর-রশিদ। তিনি ডেস্টিনি গ্রুপের বিরুদ্ধে দায়ের করা আর্থিক তছরুপের একটি মামলার শুনানিতে অংশ নিতে চট্টগ্রামে এসেছিলেন।
তার এই রহস্যজনক মৃত্যু এমন এক সময়ে ঘটল, যখন বাংলাদেশ একটি বিশেষ পরিস্থিতি পার করছে। ঠিক এক বছর আগে, ৫ আগস্ট ২০২৪-এ গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন। এর ফলস্বরূপ, দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যার প্রধান উপদেষ্টা হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ শান্ত নয়। সরকার-বিরোধী আন্দোলনে অসংখ্য প্রাণহানি এবং ব্যাপক সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশ এখনও একটি অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মুখোমুখি। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচারের ঘটনা এখনও ঘটছে। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, কবে নাগাদ তা অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। এমন একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার আবহে প্রাক্তন সেনাপ্রধানের মৃত্যু নতুন করে জল্পনার জন্ম দিয়েছে।