ওপার বাংলায় এখন সংবাদমাধ্যমের ওপর চলছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ছাত্রনেতা ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশে যে ভয়াবহ নৈরাজ্য শুরু হয়েছে, তার সবচেয়ে বীভৎস রূপ দেখল দেশের দুই প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম— ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার’। ২৮ জন সাংবাদিককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টার মতো নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল ঢাকা।
ঘটনার ক্রমপর্যায়: এক নজরে ৯টি পয়েন্টে বিভীষিকা
১. ১০ তলায় মৃত্যুফাঁদ: ঢাকার কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টারের ভবনের ১০ তলায় তখন আটকে ছিলেন ২৮ জন সাংবাদিক। ঠিক সেই সময় বিল্ডিংয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে দাউদাউ করে আগুন ধরিয়ে দেয় একদল উন্মত্ত জনতা।
২. সতর্কবার্তাও কাজে আসেনি: এক সাংবাদিক জানান, হামলার ঠিক আগেই একটি ফোন আসে যে জনতা ধেয়ে আসছে। কিন্তু সাংবাদিকরা নীচে নামার আগেই ভবনের প্রবেশপথ দখল করে শুরু হয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
৩. কালো ধোঁয়ায় দমবন্ধ পরিস্থিতি: বিডিনিউজ ২৪-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, নীচের অংশে আগুন লাগায় হু হু করে কালো ধোঁয়া ওপরের তলাগুলোতে পৌঁছে যায়। সাংবাদিকরা ঘর থেকে বেরোতে পারছিলেন না।
৪. ক্যান্টিন কর্মীর ওপর হামলা: এক ক্যান্টিন কর্মী সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করলে তাঁকে নৃসংসভাবে মারধর করা হয়। ফলে বাকি সাংবাদিকরা সিঁড়ি দিয়ে নামার সাহস হারিয়ে ফেলেন। এমনকি বিক্ষোভকারীরা ওপরে ওঠারও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
৫. দমকলের সহায়তায় রক্ষা: দীর্ঘক্ষণ মৃত্যুভয়ে দিন কাটানোর পর দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিক্ষোভকারীদের বাধা উপেক্ষা করেই দমকলের অতিরিক্ত সিঁড়ি ব্যবহার করে সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়।
৬. বন্ধ সংবাদপত্র: হামলার জেরে ডেইলি স্টারের নিউজরুম পুরোপুরি ভস্মীভূত। বর্তমানে সংবাদপত্র ছাপানো এবং অনলাইন সংস্করণ— দুই-ই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। প্রথম আলো-র অবস্থাও একই।
৭. ছায়ানটে ‘তাণ্ডবলীলা’: সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ‘ছায়ানট’ ভবনেও হামলা চালানো হয়েছে। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ভবনটির প্রতিটি কক্ষে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
৮. হাদির মৃত্যু ও হিন্দু নিধন: ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুই এই হিংসার সূত্রপাত। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার বীভৎস খবর মিলেছে।
৯. দিশেহারা দেশ: উদ্ধার হওয়া এক সাংবাদিকের আর্তনাদ, “আমরা কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি। জানি না এ দেশ কোথায় যাচ্ছে?” সাংবাদিকতা থেকে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা— সবকিছুই এখন বাংলাদেশে চরম সংকটে।