বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশীদের ভাষা’ বলে অভিহিত করার অভিযোগ উঠেছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে, যা নিয়ে এবার তীব্র প্রতিবাদ জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নিজের ‘এক্স’ (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে দিল্লি পুলিশের একটি চিঠির উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশদ্রোহী, অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই ঘটনা কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “দেখুন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ কীভাবে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ ভাষা হিসেবে বর্ণনা করছে! বাংলা, আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, যে ভাষায় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় স্তোত্র (দ্বিতীয়টি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারা রচিত) লেখা হয়েছে। যে ভাষায় কোটি কোটি ভারতীয় কথা বলে এবং লেখে, যে ভাষা ভারতের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত, এখন সেই ভাষাকেই বাংলাদেশি ভাষা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।”
তিনি এই ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশদ্রোহী, অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করে আরও লেখেন, “ভারতের সমস্ত বাংলা-ভাষী মানুষকে অপমান করছে। তারা এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারে না যা আমাদের সকলকে অবমাননা এবং হেয় করে। কেন্দ্র সরকার এই ধরনের অসাংবিধানিক ভাষা ব্যবহার করে ভারতের বাংলা-ভাষী মানুষদের অপমান এবং হেয় করছে। এই কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদের দাবি করছি।”
বিতর্কের সূত্রপাত:
সম্প্রতি নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ অধিকারিক অমিত দত্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে একটি চিঠি পাঠান। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশিদের ভাষা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরই রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় ওঠে।
তৃণমূলের তীব্র আক্রমণ ও বিজেপির পাল্টা জবাব:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই চিঠি নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা যার মাধ্যমে বাঙালি এবং বাংলা ভাষাকে অপমান করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজ্যের শাসক দলের এই অভিযোগের পাল্টা জবাবে বিজেপি জানিয়েছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ ভারতীয় হয়ে যায় না। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, অভিযোগ করার আগে তৃণমূলের উচিত বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া। তাদের মতে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি অভিযোগ।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন ‘ভোটার তালিকা সংশোধন’ (SIR) সহ বিভিন্ন ইস্যুতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট সংসদে এবং বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কঠোর অবস্থান বাংলা ভাষার প্রতি কেন্দ্রের কথিত অবহেলা নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই বিষয়টি আগামী দিনে রাজনৈতিক মহলে আরও উত্তাপ ছড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।