ভিন রাজ্যে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে বাংলা এবং বাঙালির সম্মান রক্ষায় মাঠে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, এবং দলের দাবি, দিল্লি পুলিশ বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অপমান করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এবং এবার তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন টলিউডের সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ভাষা রক্ষার লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানিয়েছেন এই জ্যেষ্ঠ অভিনেতা।
সোমবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে সোচ্চার হন। তিনি বলেন, “ভাষা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী একটি বার্তা দিয়েছেন। বাংলা ভাষা ছিল, আছে, থাকবে। তার জন্য যে কোনো লড়াই করতে হোক না কেন, সেই লড়াই করব।” বাংলা চলচ্চিত্র জগতে প্রায় চার দশকের পথচলার পর, যে ভাষায় তিনি এতদিন দর্শকদের বিনোদন জুগিয়েছেন, সেই ভাষা রক্ষার দাবিতেই এবার সরব হলেন প্রসেনজিৎ।
এর আগে তৃণমূল অভিযোগ তুলেছিল যে ভিন রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার নিজে উদ্যোগ নিয়ে আটকে পড়া শ্রমিকদের বাংলায় ফিরিয়েও এনেছে। ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ স্বীকার করেছেন যে, বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। এমনকী, ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষা আন্দোলনেরও ডাক দেন।
এই আবহাওয়ার মধ্যেই সম্প্রতি দেখা যায়, দিল্লি পুলিশ বঙ্গ ভবনে একটি চিঠি পাঠায়। সেই চিঠিতে তারা লেখে যে, আটক করা কয়েকজন ব্যক্তির থেকে প্রাপ্ত নথি পরীক্ষার জন্য একজন অনুবাদকের প্রয়োজন, যিনি ‘বাংলাদেশি ভাষা’ পড়তে সক্ষম। এর পরেই তৃণমূল তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে অপমান করা হয়েছে বলে ক্ষোভ উগড়ে দেয়। এবার মুখ্যমন্ত্রীর সেই লড়াইয়ের পাশে দাঁড়ালেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যা এই বিতর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ করল।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই প্রসেনজিৎ নিজেই বাংলা ভাষা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ‘মালিক’ ছবির সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতার এক সাংবাদিক তাঁকে বাংলায় প্রশ্ন করলে, তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “এখানে বাংলায় কথা বলার কী প্রয়োজন?” এই মন্তব্যের পর তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সমালোচকদের রোষানলে পড়ে কার্যত ক্ষতবিক্ষত হন টলিউডের এই সুপারস্টার। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি ট্রোলড হন ব্যাপক ভাবে। এই ঘটনার কিছুদিন পর অভিনেতা জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে নেন। আজকের এই মন্তব্য তাঁর সেই পুরনো বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসার এবং ভাষা রক্ষার আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করার একটি প্রয়াস বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই পদক্ষেপ আসন্ন ছাব্বিশের ভোটের আগে ‘বাঙালি অস্মিতা’র প্রশ্নে তৃণমূলের হাত শক্ত করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।