রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন চরম তোলপাড়, ঠিক সেই সময়েই কড়া পদক্ষেপ নিল বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়। ভুয়ো নথি পেশের অভিযোগে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট ফ্যাকাল্টি অধ্যাপিকা জলি ভট্টাচার্যকে বহিষ্কার করার কথা জানালেন উপাচার্য দিলীপকুমার মাইতি।
নিয়োগ দুর্নীতির আবহে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কী ছিল জলি ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ?
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অস্থায়ী অধ্যাপিকা হিসাবে যোগদানের সময় জলি ভট্টাচার্য যে অভিজ্ঞতার শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন, তা নিয়েই প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল।
❌ উপাচার্যের বক্তব্য: উপাচার্য দিলীপকুমার মাইতি জানান, “জলি ভট্টাচার্য নামে আমাদের যে গেস্ট ফ্যাকাল্টি ছিলেন, তিনি যে অভিজ্ঞতার শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি আগে যে কলেজে পড়াতেন, সেই কবি জয়দেব মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপালের সই ছিল না। সেখানে আমাদের তখনকার পরীক্ষা নিয়ামক প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই ছিল।”
তদন্তে জানা গিয়েছে, জলি ভট্টাচার্য অস্থায়ী অতিথি অধ্যাপিকা ছিলেন না, শুধুমাত্র ‘টিএ’ পেতেন। তা সত্ত্বেও তিনি অধ্যক্ষকে অন্ধকারে রেখে, তাঁর সিলমোহর ব্যবহার করে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি জলি ভট্টাচার্যকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করার পরই তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কাঠগড়ায় কলেজের অধ্যাপকও
এই জালিয়াতির ঘটনায় সরাসরি জড়িয়ে গিয়েছে ইলামবাজারের কবি জয়দেব মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তিনি একইসঙ্গে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক পদেও আসীন ছিলেন (বর্তমানে মেয়াদ শেষ)। উপাচার্য জানান, যেদিন জলি ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দেন, সেই বোর্ডে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, জলি ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে নম্বর বেশি দিয়ে দেওয়া এবং ইউনিভার্সিটির গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
উচ্চশিক্ষা দফতরে কড়া চিঠি
অধ্যাপিকা জলি ভট্টাচার্যকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন অধ্যাপক প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরসহ তাঁর কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে উপাচার্য জানিয়েছেন।
তবে এই বহিষ্কার এবং অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপিকা জলি ভট্টাচার্য বা অধ্যাপক প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, কারও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।