একদিকে সন্তান আগমনের আনন্দ, আর অন্যদিকে ভোটার তালিকায় নাম বাদ যাওয়ার আতঙ্ক। এই দুইয়ের টানাপোড়েনে এক অভাবনীয় দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বিডিও অফিস। সন্তান প্রসবের নির্দিষ্ট দিনেই এসআইআর (SIR) শুনানির ডাক পেয়ে নথিপত্র হাতে নিয়ে হাজির হলেন ২৭ বছরের অন্তঃসত্ত্বা বন্দনা মণ্ডল।
কী ঘটেছিল চন্দ্রকোনায়?
শনিবার ছিল ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রথম দফার শুনানি। বিডিও অফিসের ভিড়ে ঠাসা সভাকক্ষে তখন বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে সদ্য অপারেশন হওয়া বৃদ্ধাদের লাইন। তার মধ্যেই দেখা যায় নিচে একটি চেয়ারে বসে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বছর ২৭-এর বন্দনা। বিএলও-র দেওয়া নোটিশ অনুযায়ী এদিনই তাঁর শুনানির তারিখ ছিল, আবার ডাক্তারদের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী এদিনই তাঁর সন্তান প্রসবের (Delivery) তারিখ।
প্রশাসনের গাফিলতি নাকি ভুল বোঝাবুঝি?
নিয়ম অনুযায়ী, অসুস্থ বা বিশেষ পরিস্থিতিতে আধিকারিকদের বাড়িতে গিয়ে শুনানি করার কথা। বন্দনার পরিবার জানাচ্ছে, ২২ ডিসেম্বর নোটিশ পাওয়ার পরই তাঁরা জানিয়েছিলেন যে ২৭ তারিখ ডেলিভারির ডেট। কিন্তু অভিযোগ, বিএলও সেই বার্তা প্রশাসনের কানে পৌঁছাননি। ফলে ভোটার তালিকায় নাম বাতিলের ভয়ে ঝুঁকি নিয়েই বিডিও অফিসে আসতে বাধ্য হন ওই দম্পতি।
তৎপর বিডিও, তড়িঘড়ি ব্যবস্থা:
একজন প্রসূতি মহিলা শুনানির জন্য অফিসে এসেছেন শুনেই হুলুস্থুল পড়ে যায় প্রশাসনিক মহলে। বিডিও উৎপল পাইক এবং অন্যান্য আধিকারিকরা তড়িঘড়ি সভা ছেড়ে নিচে নেমে আসেন। বন্দনার শারীরিক অবস্থা বুঝে লাইনে দাঁড় না করিয়েই মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে তাঁর নথি যাচাইয়ের কাজ শেষ করে তাঁকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিডিও অবশ্য জানিয়েছেন, “আগে জানানো হলে আমরা ওনার বাড়িতেই শুনানির ব্যবস্থা করতাম। তবে উনি আসার পর দ্রুত কাজ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
কর্তব্যের কাছে হার মানল যন্ত্রণা:
শুনানি শেষে বন্দনা মণ্ডল জানান, তিনি সুস্থ আছেন। ভোটার তালিকায় নাম ঠিক হওয়াতে তাঁর দুশ্চিন্তা কেটেছে। ব্যথার মধ্যেও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পেরে তিনি খুশি।
চন্দ্রকোনার এই ঘটনা যেমন নাগরিক সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে, তেমনই সরকারি ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা নিয়েও তুলে দিচ্ছে বড়সড় প্রশ্ন।