‘প্রতিদিন ৪০টি ফর্ম বিলি কি বোঝা নয়?’—নির্বাচন কমিশনের যুক্তি খারিজ করে BLO-দের পাশে দাঁড়াল সুপ্রিম কোর্ট

SIR (Special Intensive Revision of Electoral Rolls) বা ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ কাজের চাপে সারা দেশে একের পর এক বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) অসুস্থ হয়ে পড়া কিংবা আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এবার এই ইস্যুতে বড়সড় নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যে, BLO-দের কাজের চাপ কমাতে ‘অ্যাডিশনাল স্টাফ’ (Additional Staff) নিয়োগ করা যেতে পারে।

প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

💼 অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সওয়াল-জবাব

শুনানির সময় BLO-দের কাজের চাপ নিয়ে তুমুল সওয়াল-জবাব হয়। তামিলাগা ভেত্তরি কাজ়হাগাম (TVK) নামক রাজনৈতিক দলের একটি পিটিশনের ভিত্তিতে এই শুনানি চলছিল, যেখানে অভিযোগ করা হয় যে চাপ নিতে না পেরে ৩৫-৪০ জন BLO আত্মহত্যা করেছেন।

  • নির্বাচন কমিশনের যুক্তি: কমিশনের আইনজীবী জানান, প্রতি পোলিং বুথে ১২০০ ভোটার রয়েছে। BLO-কে ৩০ দিনের মধ্যে সর্বাধিক ১২০০ ফর্ম বিলি ও সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এই কাজের চাপকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “প্রতিদিন ১০টি করে ফর্ম বিলি কি বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে?”

  • পিটিশনারের পাল্টা দাবি: পিটিশনারের আইনজীবী কপিল সিব্বল জবাবে বলেন, “না, এটি প্রতিদিন ৪০টি করে দাঁড়াচ্ছে। এমন অনেক বিল্ডিং রয়েছে যেখানে হয়তো সিঁড়ি ছাড়াই ১০০ জন বসবাস করেন। প্রতিটি ফ্লোরে গিয়ে ফর্ম বিলি করতে হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, অনেক BLO অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা শিক্ষক-শিক্ষিকা, যাঁদের কাজের পাশাপাশি এই অতিরিক্ত চাপ নিতে হচ্ছে।

  • আইনজীবীর হুঁশিয়ারি: আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ অভিযোগ করেন, ROPA (Representation of the People Act) সেকশন ৩২ অনুযায়ী নোটিস পাঠিয়ে BLO-দের বলা হচ্ছে যে ডেডলাইন ছুঁতে না পারলে ২ বছরের জেল হতে পারে, যা তাঁদের ওপর চূড়ান্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।

🛑 সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ

সওয়াল-জবাবের পর শীর্ষ আদালত জানায়, যাঁরা এই কাজে যুক্ত, কাজ শেষ করা তাঁদের ডিউটির মধ্যে পড়ে। তবে সেই কাজ করতে গিয়ে যদি তাঁরা রোজের ডিউটির সঙ্গে অতিরিক্ত চাপে পড়েন, সে ক্ষেত্রে SIR-এর কাজে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে

এছাড়াও, আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, যদি কেউ নির্দিষ্ট কারণে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান, তবে ‘কেস টু কেস’ (Case to Case) ভিত্তিতে বিচার করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও BLO-দের কাজের চাপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গ-সহ উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, কেরালা, তামিলনাড়ু— সারা দেশের সেই সব BLO-দের জন্য বড় স্বস্তি আনবে, যাঁরা অতিরিক্ত কাজের চাপের অভিযোগ তুলছিলেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy