পাকিস্তানি হয়েও বাংলায় ভোটার! আধার-প্যান থেকে পাসপোর্ট—সবই ছিল আজাদের

তিলোত্তমার বুকেই পাকিস্তানি নাগরিকের আস্তানা! ভুয়ো পরিচয় দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের নাগরিকত্ব হাতিয়ে নেওয়ার এক ভয়ঙ্কর জাল ফাঁস করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। ধৃত পাকিস্তানি নাগরিক আজাদ মালিক ওরফে আজাদ হুসেনের জালিয়াতির ফিরিস্তি দেখে চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের। মধ্যমগ্রাম ও নৈহাটির ঠিকানায় ভোটার কার্ড বানিয়ে এই পাকিস্তানি নাগরিক দিব্যি জালিয়াতির কারবার চালাচ্ছিল বাংলায়।

কীভাবে চলত ‘সিটিজেনশিপ’ জালিয়াতি? ইডির তদন্তে উঠে এসেছে, আজাদ মালিক স্থানীয় এক ব্যক্তি ইন্দুভূষণ হালদার ওরফে দুলালের সঙ্গে মিলে একটি বড় সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল। এদের প্রধান কাজ ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের টাকার বিনিময়ে ভারতীয় পাসপোর্ট, আধার ও প্যান কার্ড বানিয়ে দেওয়া। একেকটি পাসপোর্টের জন্য নেওয়া হত ৫০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই ৩৫০-৪০০ জন বাংলাদেশিকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া সেরেছিল এই চক্র।

তদন্তে ধরা পড়া আজব সব জালিয়াতি: জালিয়াতি করতে গিয়ে আজাদ ও তার সহযোগীরা এতটাই মরিয়া ছিল যে কিছু সাধারণ বুদ্ধির কথাও তারা মাথায় রাখেনি। ইডি জানিয়েছে:

জৈবিকভাবে অসম্ভব: দুই ভাইয়ের পাসপোর্টে জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ১ জানুয়ারি ১৯৮৮ এবং ১ এপ্রিল ১৯৮৮। অর্থাৎ মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে দুই ভাইয়ের জন্ম দেখানো হয়েছে, যা অসম্ভব।

জাল নথি: ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর দপ্তরের স্ট্যাম্প ছাড়া ভুয়া স্লিপ ব্যবহার করে ২৯টি পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল।

হাওলা নেটওয়ার্ক: কেবল পরিচয়পত্র নয়, ইউপিআই ও হাওলার মাধ্যমে সীমান্ত পারাপারে অর্থ লেনদেনের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক চালাচ্ছিল আজাদ।

৮০ কোটির মানি লন্ডারিং: ইডির দাবি, ‘গোল্ডেনাইজ ফরেক্স অ্যান্ড ট্র্যাভেলস’ নামক একটি মানি চেঞ্জার সংস্থার আড়ালে অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করত এই পাকিস্তানি নাগরিক। আরবিআই-এর নিয়ম তোয়াক্কা না করে ৮০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে। বহু সাধারণ মানুষের অজান্তেই তাঁদের নথি ব্যবহার করে ভুয়া ক্যাশ মেমো তৈরি করে এই বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কে জমা করা হত।

বর্তমান পরিস্থিতি: গত ১৫ এপ্রিল আজাদ মালিককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৩ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় তার মূল সহযোগী ইন্দুভূষণ হালদারকে। বর্তমানে তারা ইডির বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর কলকাতার বিশেষ আদালতে ইডি এদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছে।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও ইডির এই যৌথ সাফল্যে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার একটি বড় ছিদ্র খুঁজে পাওয়া গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy