ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক যখন তলানিতে, পহেলগাম হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চরমে, ঠিক তখনই এক অভিনব উপায়ে বাদল অধিবেশনের ঘোষণা করে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। ৪৫ দিনেরও বেশি সময় আগে বাদল অধিবেশনের তারিখ জানিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, এই মুহূর্তে কোনো বিশেষ অধিবেশন ডাকার তাদের কোনো ইচ্ছা নেই। আর এতেই ফুঁসছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’।
গত এপ্রিল মাস থেকেই ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতা গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দাবির জবাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বুধবার সংসদ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সরাসরি বাদল অধিবেশনের (Monsoon Session) ঘোষণা করে দেন। আগামী ২১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১২ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে এই অধিবেশন। সাধারণত অধিবেশন শুরুর ১০-১৫ দিন আগে ঘোষণা করা হলেও, এবার প্রায় ৪৭ দিন আগে এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ।
বিশেষ অধিবেশন না হওয়ার কারণ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিরোধীরা
কেন্দ্রের এই অভূতপূর্ব পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস সহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ এই প্রসঙ্গে ঝাঁঝালো মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এতদিন আমরা দেখতাম অধিবেশন শুরু ১০-১৫ দিন আগে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম দেখলাম ৪৭ দিন আগে বাদল অধিবেশনের ঘোষণা করছে কেন্দ্র সরকার। আসলে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অধিবেশন এড়িয়ে চলছেন।”
জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে একাধিক প্রশ্ন তোলেন, যার উত্তর এড়াতেই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। তার প্রশ্নগুলি হলো: “পহেলগাম হামলা কীভাবে হল? আমাদের ভারতীয় এজেন্সি কীভাবে এই হামলার কথা আগে থেকে জানতে পারল না? মূল অভিযুক্তদের এখনও ধরা হল না কেন? ‘অপারেশন সিঁদুর’ লঞ্চ করার ৪ দিনের মাথায় কেন বন্ধ করে দেওয়া হল? আমেরিকা কেন যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ক্রেডিট নিচ্ছে?” তিনি স্পষ্ট জানান, “এই সমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন যাতে প্রধানমন্ত্রীকে না করতে হয়, সেই কারণেই তিনি বিশেষ অধিবেশন এড়িয়ে যাচ্ছেন।”
বাদল অধিবেশনেও চলবে প্রশ্নবাণ
তবে জয়রাম রমেশ এও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী চাইলেও বাদল অধিবেশন এড়াতে পারবেন না। তিনি বলেন, “উনি বিশেষ অধিবেশন এড়িয়ে যাচ্ছেন, এটা স্পষ্ট। কিন্তু বাদল অধিবেশন এড়াবেন কীভাবে? ওনাকে তো প্রশ্নের সম্মুখীন সেখানেও হতে হবে। আমরা বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পহেলগাম এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন করব। সেখানে তিনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।”
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু অবশ্য জানিয়েছেন যে, বাদল অধিবেশনে পহেলগাম হামলা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে। যদিও কেন্দ্রের এই ‘অদ্ভুত’ কৌশলে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি বিশেষ অধিবেশন এড়াতে চাইছে সরকার, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কৌশল কাজ করছে? ২১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া বাদল অধিবেশনেই হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে।