পহেলগাঁও হামলার ভয় দেখিয়ে ৩৭ লক্ষ টাকা প্রতারণা,’ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ফাঁদে বৃদ্ধ

সাইবার প্রতারণার শিকার হয়ে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার সাথে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা খোয়ালেন শিলিগুড়ির এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ডিজিটাল গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে প্রতারকরা এই বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পূর্ব বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা মনোজমোহন সেনশর্মা (৭৮) নামে ওই বৃদ্ধ এখন সর্বস্ব হারিয়ে দিশাহারা।

ঘটনার সূত্রপাত ৪ আগস্ট। মনোজবাবুর মোবাইলে একটি ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে সুমিত মিশ্র নামে এক ব্যক্তি নিজেকে পহেলগাঁও থানার পুলিশ আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি মনোজবাবুকে জানান যে, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি তথ্য পাচারের সাথে জড়িত এবং মানি লন্ডারিং আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রথমে মনোজবাবু বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। কিন্তু পরে ভিডিও কলে প্রেম কুমার এবং দেবাশিস ঘোষ নামে আরও দু’জন তার সাথে কথা বলতে শুরু করেন। তারা মনোজবাবুকে হুমকি দেন যে এই বিষয়ে কাউকে জানালে তার বিপদ হবে এবং কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

প্রতারকরা মনোজবাবুকে বিশ্বাস করানোর জন্য নানা কৌশল ব্যবহার করে। ভিডিও কলে তারা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর পোশাক পরে হাজির হয়। নাটকীয়ভাবে একজন অন্য এক কর্মকর্তার ঘরে স্যালুট করে প্রবেশ করে এবং সেনাবাহিনীর কায়দায় ‘জয় হিন্দ’ বলে সম্ভাষণ জানায়। তদন্তের নামে তারা মনোজবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চেয়ে নেয়। দেবাশিস নামের ব্যক্তিটি ভিডিও কলে নিজের মুখ আড়াল করে রেখেছিলেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ক্যামেরার সামনে আসতে মানা আছে। এরপর মনোজবাবুর হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়া ইনকোয়ারি রিপোর্ট, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট এবং এনআইএ-র পরিচয়পত্র পাঠানো হয়।

এই প্রতারকদের কথায় ভয় পেয়ে মনোজবাবু দু’টি ভিন্ন দফায় প্রায় ৩৭ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা তাদের দেওয়া একটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন।

মনোজবাবুর ভাই ধ্রুবময় সেনশর্মা জানান, মনোজবাবুর ছেলের ফোন নম্বরটি একটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। টাকা ট্রান্সফার হওয়ার পর তার সিঙ্গাপুরে থাকা ছেলে ব্যাংকের মেসেজ পায় এবং বাবাকে ফোন করে পুরো বিষয়টি জানতে পারে। তখনই এই প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর শিলিগুড়ি সাইবার ক্রাইম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং সম্ভবত টাকাগুলো অন্ধ্রপ্রদেশের একটি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে।

প্রায় কুড়ি বছর আগে কেন্দ্রীয় জল কমিশন থেকে অবসর নিয়েছেন মনোজমোহন সেনশর্মা। আট বছর আগে তিনি শিলিগুড়িতে এসে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তার একমাত্র ছেলে সিঙ্গাপুরে থাকেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy