দুর্গাপূজা শেষ। দশমীর বিসর্জনের বিষাদের মাঝেই একাদশীর দিন শুরু হলো এক বিশেষ লোকায়ত দেবীর আরাধনা—দেবী ভান্ডানি। মূলত জেলার কৃষক সমাজ এই দেবীর পূজা করেন। একদিনের এই পূজা ও তাকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হলো মাল ব্লকের ক্রান্তি এবং হেলাপাকরি সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে।
পুরুষের বেশে দেবী!
এই পূজার অন্যতম আকর্ষণ হলো মাল ব্লকের ক্রান্তির চেকেন্দা ভান্ডানির পূজা, যেখানে দেবী পূজিতা হন পুরুষবেশী রূপে। দ্বি-ভূজা এই দেবীর বাহন হলো ব্যাঘ্র। ভান্ডানি মায়ের সঙ্গে এখানে থাকেন তাঁর চার সন্তান—লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিক।
কেন এই ভান্ডানির পূজা?
এই পূজার পেছনে লুকিয়ে আছে এক লোককথা। কথিত আছে, দুর্গাপূজার বিসর্জনের পর যখন দেবী কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় ময়নাগুড়ির বার্নিশের কৃষকরা দেবীর আরাধনা শুরু করেন এবং তাঁকে তাদের পূজা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন।
একসময় এই এলাকায় প্রবল খরায় অজন্মা দেখা দেয়। কৃষকদের ঘরে ফসল না হওয়ায় চরম দারিদ্রতা নেমে আসে। দরিদ্র চাষীরা তখন মাকে কৈলাসে যেতে বাধা দেন এবং আরাধনা করেন—দেবী যেন তাঁদের কাছে ভান্ডানি রূপে পূজা নিয়ে অজন্মা ঘুচিয়ে শস্যগোলা ভরে দেন।
কৃষকদের সেই আকুল আরাধনায় সাড়া দিয়ে দেবী ভান্ডানি রূপে পূজা গ্রহণ করেন একাদশীর দিনে। সেই বিশ্বাস থেকেই দেবী ভান্ডানি রূপে আজও বিরাজ করে কৃষকের শস্যের ভান্ডার ভরে দেন।
শস্যের ভান্ডার ভাণ্ডার পূর্ণ করার এই দেবীকে কেন্দ্র করে আজও এই অঞ্চলে মহা ধূমধামের সঙ্গে একদিনের এই বিশেষ পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।