প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে কর্মরত শিক্ষকরা বড়সড় স্বস্তি পেলেও, মামলাকারী পক্ষ রায়কে ‘আবেগতাড়িত’ বলে অভিহিত করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি:
বুধবারের রায়ে ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি বহাল রাখার ক্ষেত্রে মূলত দুটি প্রধান যুক্তি দিয়েছে:
-
মানবিক কারণ: আদালত পর্যবেক্ষণ করে যে, ন’বছর চাকরি করার পর শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হলে তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের উপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে। বিচারপতিরা বলেন, “কয়েকজন মাত্র ব্যর্থ চাকরিপ্রার্থীর আর্জিতে একটা গোটা ব্যবস্থা নষ্ট করার নির্দেশ দিতে পারে না আদালত।”
-
পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাব: বেঞ্চের মতে, সামগ্রিক চাকরি বাতিল করার জন্য পর্যাপ্ত অনিয়মের প্রমাণ প্রয়োজন, যা সিবিআই তদন্তেও উঠে আসেনি। যদিও সিবিআই তদন্তে ৯৬ জন এমন শিক্ষক চিহ্নিত হয়েছেন যাঁরা পাশ না-করা সত্ত্বেও চাকরি পেয়েছিলেন এবং ২৬৪ জন প্রার্থীর ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গিয়েছিল, তবুও এই সংখ্যাটিকে পুরো নিয়োগ বাতিলের জন্য যথেষ্ট মনে করেনি আদালত। আদালত স্পষ্ট করে, একটি বোর্ডের পরীক্ষায় প্রমাণিত বৃহত্তর দুর্নীতি এবং প্রমাণ ছাড়া অভিযোগের মধ্যে তফাত আছে।
মামলাকারী আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া:
আদালতের এই রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীরা।
-
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য: তিনি বলেন, “আমাদের যুক্তিকে গ্রহণ করেনি আদালত। আমার মনে হয় এখানে আদালত যুক্তি বা আইনের থেকে বেশি আবেগের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই নির্দেশ দিয়েছে। আমরা নির্দেশের কপি দেখার পর যদি মনে করি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাব, তাহলে আবেদন করা হবে।”
-
তরুণজ্যোতি তিওয়ারি: তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “আদালতের কাছে আমরা পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ তুলে দেওয়ার পরও আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে একটা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিই মান্যতা পেল। কিন্তু আমাদের কাছে রাস্তা খোলা আছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি (Special Leave Petition) দায়ের করব।”
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০২৩ সালের ১২ মে প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায়।