প্রতি বছরের মতো এবারও প্রাচীন ও রোমহর্ষক রীতি মেনে বীরভূমের দুবরাজপুরে সম্পন্ন হলো শতাব্দী প্রাচীন শ্মশানকালীর বিসর্জন। দুর্গাপুজোর দশমীর ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ একাদশীর সন্ধ্যায় এই বিসর্জন ঘিরে দুবরাজপুর শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে হাজারে হাজারে ভক্তের ঢল নামে।
শেকলবন্দী বিদায়, দাস পরিবারের বিশেষ অধিকার
এই বিসর্জনের মূল আকর্ষণ এবং বৈশিষ্ট্য হলো এর স্বতন্ত্র প্রথা। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, আজও মাকে মন্দির থেকে বেদি থেকে নামানো হয় শেকল ও দড়ি বেঁধে। স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী, দাস পরিবারের সদস্যরা পরম্পরাগতভাবে এই বিসর্জন দিয়ে আসছেন।
যদিও এই প্রথার একসময় আরও কিছু ভয়ঙ্কর দিক ছিল। দাস পরিবারের সদস্য গুরুপদ দাস জানিয়েছেন, একসময় নাকি দেবীকে বেদি থেকে নামানোর সময় গালিগালাজ করা হতো এবং ঝাঁটাও দেখানো হতো। তবে সভ্য সমাজে সেই অশোভন রীতি এখন সম্পূর্ণভাবে উঠে গেলেও, মায়ের বিসর্জন এখনও শেকল ও দড়ি বেঁধেই সম্পন্ন হয়। এই বিশেষ প্রথাকে ঘিরেই দাস পরিবারের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘটে, তৈরি হয় এক উৎসবের মেজাজ।
পরম্পরা বৈষ্ণব-দাস বিভাজন
দুবরাজপুরের এই শ্মশানকালীর পুজোয় রয়েছে এক অদ্ভুত পরম্পরাগত বিভাজন। মায়ের বিশালাকার মূর্তি গড়া থেকে শুরু করে সারাবছর পুজো এবং দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে বৈষ্ণবদের হাতে, আর বিসর্জনের গুরুদায়িত্ব থাকে দাস পরিবারের সদস্যদের হাতে। শত শত বছর ধরে এই ঐতিহ্য একইভাবে পালিত হয়ে আসছে।
শ্মশানকালী মন্দির সংলগ্ন রুজের পুকুরেই বিসর্জন দেওয়া হয় এই বিশালাকার প্রতিমা। হাজার হাজার ভক্তের ভিড় সামাল দিতে এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের তরফে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
দুবরাজপুরের এই শ্মশানকালী বিসর্জন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি যেন প্রাচীন লোক-বিশ্বাস আর আধুনিক সমাজের সংমিশ্রণে তৈরি এক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রতিচ্ছবি।