রাজ্য বিজেপির অন্দরে চলমান জল্পনা ও বিতর্কের মধ্যেই আজ দিল্লিতে গিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নিজের যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শিবপ্রকাশের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি নিজেই সাংবাদিকদের কাছে এই ইঙ্গিত দেন। প্রকাশ্যেই দিলীপ অভিযোগ করেছেন, দলের বৈঠকেই তাঁকে ‘চেয়ার দেওয়া হত না’, যা তাঁর প্রতি উপেক্ষা এবং অসম্মানেরই ইঙ্গিত বহন করে।
জরুরি তলব ও দিল্লির বৈঠক
গতকালই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জরুরি ভিত্তিতে দিলীপ ঘোষকে দিল্লিতে তলব করে। সেই নির্দেশ মতো আজ দুপুরের মধ্যেই দিল্লিতে পৌঁছন দিলীপ ঘোষ এবং এরপর সস্ত্রীক বিজেপির সদর দফতরে যান। সেখানেই কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশের সঙ্গে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়ে দিলীপের অবস্থান
বৈঠক শেষে বেরিয়ে দিলীপ ঘোষ জানান, আপাতত তাঁকে বাংলা নিয়ে বিশেষ কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “আমি সক্রিয় আছি। প্রত্যেকদিন টিভিতে মানুষ আমাকে দেখছে। দলের সাংগঠনিক কাজে হয়তো সক্রিয় নেই। দল আমাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়নি। সেটা এক বছর হল। ২০২৪ পর্যন্ত আমি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলাম। আবার নির্বাচন আসছে। দল যদি আমাকে দায়িত্ব দেয় আমি আবার দায়িত্ব পালন করব।” তাঁর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি আবারও সাংগঠনিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহী এবং দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ
দলের রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে এতদিন উপেক্ষা করায় যে ক্ষোভ জমেছিল, তা কমেছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরেই দিলীপ ঘোষ বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। প্রাক্তন সাংসদ বলেন, “এর আগে থেকে অনেক ঘটনা আছে। পার্টির মিটিংয়ে আমাকে চেয়ার দেওয়া হতো না। আমি তো কাজ করেছি, দল ছেড়ে চলে যাইনি। যাঁরা আমাকে পার্টি ছাড়াতে চেয়েছিল তাঁরা অনেক চেষ্টা করেছে। দিলীপ ঘোষ দল ছাড়বে কখনও বলেনি। যে দলকে দাঁড় করিয়েছে সে দল ছাড়বে কেন? ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তখন লড়ব।” তাঁর এই বক্তব্যে দলের একাংশের বিরুদ্ধে তাঁকে কোণঠাসা করার এবং দল থেকে সরানোর চেষ্টার অভিযোগ স্পষ্ট।
মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সমালোচকদের জবাব
সম্প্রতি দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের সাক্ষাৎ নিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্দরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছিল। সেই সমালোচকদেরও আজ চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন দিলীপ। দলের নেতাদের একাংশকেই নিশানা করে তিনি বলেন, “আমি তো সবার প্রশংসা করি। আমার সঙ্গে তো কারও শত্রুতা নেই। যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন তাঁদের নামে তো অনেক কেস আছে। যাঁকে নিয়ে এত চর্চা তাঁর নামে কেস নেই? চোর-ডাকাত বলে যাঁকে প্রমাণ করা যায়নি, তাঁর পাশে যদি আমি বসি তাহলে প্রমাণ হল যে আমি খারাপ হয়ে গেলাম? আমি ওখানে যাওয়ার জন্য দলের কর্মীরা নয়, কিছু লোক অস্বস্তিতে ছিল। সমস্যা হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে এত গুরুত্ব দিয়েছেন কেন। তাই অনেকে কষ্ট পেয়েছেন।”
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যগুলি রাজ্য বিজেপির অন্দরের টানাপোড়েনকে আরও প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কীভাবে সামাল দেয়, এবং তাঁর ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।