হরিয়ানার এডিজি ওয়াই পূরণ কুমারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য জুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠার পরই অবশেষে নড়েচড়ে বসল সরকার। মৃত আইপিএস-এর পরিবারের অভিযোগ এবং বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজিপি) শত্রুজিৎ সিং কাপুরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠাল মনোহর লাল খট্টর-নায়াব সিং সাইনি সরকার। তাঁর জায়গায় অতিরিক্ত ডিজিপি-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৯৯২ ব্যাচের আইপিএস অফিসার ওম প্রকাশ সিংকে।
এই গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার মৃত পুলিশ আধিকারিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনির কাছে দ্রুত তদন্ত ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
কী অভিযোগ পূরণের স্ত্রীর?
মৃত এডিজি-র স্ত্রী, আইএএস অফিসার অমনীত পি কুমারের বিস্ফোরক অভিযোগের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হল সরকার। অমনীত দেবী ডিজিপি শত্রুজিৎ সিং কাপুর এবং রোহতকের এসপি নরেন্দ্র বিজারনিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তাঁর আরও গুরুতর অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে দীর্ঘদিন ধরে জাত তুলে হেনস্থা করা হচ্ছিল। মৃত আইপিএস অফিসারের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮ পাতার একটি নোটের ভিত্তিতেই তিনি এই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছিলেন। অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে পূরণ কুমারের পরিবার মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করতে দিতেও রাজি হচ্ছিল না। পরিবারের এই অনড় অবস্থান এবং বিরোধীদের ক্রমাগত আক্রমণের মুখেই রাজ্যপাল ও স্বরাষ্ট্র দপ্তর ডিজিপি-কে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, ডিজিপি শত্রুজিৎ সিং-এর বদলে ১৯৯২ সালের আইপিএস অফিসার ওমপ্রকাশ সিং-কে অতিরিক্ত ডিজিপি-র দায়িত্বে আনা হয়েছে। বর্তমানে তিনি হরিয়ানা পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর-সহ একাধিক পদে কর্মরত। ইতোমধ্যে, অভিযুক্ত রোহতকের এসপি নরেন্দ্র বিজর্নিয়াকে বদলি করে সেই পদে সুরেন্দ্র ভাউরিয়াকে আনা হয়েছে।
রাহুল গান্ধীর কড়া বার্তা
পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচারের আবেদন জানান। তিনি বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তিন দিন পরও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ওয়াই পূরণ কুমারের দুই মেয়ে পিতৃহারা হয়ে পড়ল।”
‘দলিত হলে নিপীড়ন সহ্য করতে হবে’ এই কথা বলে তিনি অভিযোগ করেন, “এই ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট, এই অফিসারের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য এবং তাঁর কর্মজীবন ও সুনাম নষ্ট করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তাঁর উপর পদ্ধতিগত বৈষম্য চালিয়ে আসছিলেন বাকি আধিকারিকরা। আপনি যতই সফল বা বুদ্ধিমান হোন না-কেন, দলিত হলে আপনাকে দমন নিপীড়ন সহ্য করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, মৃত আধিকারিকের দুই মেয়েকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন। শেষকৃত্যের অনুমতি দিন, এই নাটক বন্ধ করুন এবং পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টিকারী কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।”
কংগ্রেস সাংসদ এও দাবি করেন, “ঘটনাটি খুব সংবেদনশীল। তিনি (যাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে) একজন কর্মরত অফিসার। আমরা সকলেই বুঝতে পারছি কীভাবে এই পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে। সুতরাং, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা উচিত। কারণ, এই মামলাটি (পূরণ কুমারের বিরুদ্ধে) মিথ্যাভাবে তৈরি করা হয়েছে।”