ঝাড়গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পাশাপাশি এনআরসি ইস্যুকে কেন্দ্র করে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি পাঁচমাথা মোড় পর্যন্ত এক বিশাল পদযাত্রা ও জনসভার নেতৃত্ব দেন, যেখানে তিনি নিজেই এনআরসি-বিরোধী একটি গান লিখে প্রকাশ করেন। তাঁর লেখা এই গানটির প্রথম পংক্তি ছিল “ছি… ছি… ছি এনআরসি…”। মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিনব প্রতিবাদ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই নিজেকে একজন সৃষ্টিশীল লেখক, কবি এবং সুরকার হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁর একাধিক লেখা বই রাজ্যের পাঠ্যক্রমেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এবার তিনি তার সেই সৃষ্টিশীলতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলেন।
ঝাড়গ্রামে আয়োজিত পথসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই বামফ্রন্ট সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “একসময় ঝাড়গ্রাম ছিল আতঙ্কের জায়গা। মানুষ এখানে আসতে ভয় পেত। গোয়ালতোড়, বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রামে অস্ত্র ও রক্তের রাজত্ব ছিল। আমি কিন্তু তখনও এখানে এসেছি। ক্ষমতায় আসার পরই শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি।” তিনি আরও বলেন, তৃণমূল সরকার ঝাড়গ্রামের মানুষের পাশে থেকেছে এবং এখানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
তবে সভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এনআরসি নিয়ে তাঁর কড়া বার্তা। এর আগেও তিনি একাধিকবার এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু এবার তিনি গানের মাধ্যমে মানুষের মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এনআরসি এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারে। এর মাধ্যমে বিজেপি সরকার বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে।” তিনি জনগণকে অভয় দিয়ে বলেন, “আমরা এনআরসি করতে দেব না। আমার রাজ্যে সবাই শান্তিতে থাকবে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট নেওয়ার রাজনীতি আমরা মানি না।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক কৌশল এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক দারুণ মিশ্রণ। তাঁর লেখা এই গান সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে দলের সাংস্কৃতিক শাখা ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁর এই গান আগামী দিনে তৃণমূলের ‘প্রতিরোধের সুর’ হয়ে উঠবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত রাজ্য রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রীর “ছি…ছি…ছি এনআরসি” গানটিই সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয়।