চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত বিরল ও অস্বাভাবিক এক ঘটনা ঘটল কর্নাটকে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর কর্নাটক ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (KIMS)-এ এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। মা এবং শিশু দু’জনেই সুস্থ থাকলেও, পরে শিশুটির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে গিয়ে কার্যত চক্ষু চড়কগাছ হয় চিকিৎসকদের। দেখা যায়, নবজাতকের পেটের ভিতরেই আরও একটি ভ্রূণ বড় হচ্ছে!
চিকিৎসা পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় ‘ফেটাস ইন ফেটু’ (Fetus in Fetu বা FIF)। চিকিৎসকরা এটিকে একটি ‘অস্বাভাবিক এবং বিরল’ ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন।
KIMS-এর পরিচালক ডাঃ ঈশ্বর হোসামানি এবং প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ ঈশ্বর হাসবি নিশ্চিত করেছেন যে, এই অস্বাভাবিকতা প্রতি পাঁচ লক্ষ ভূমিষ্ঠ সন্তানের মধ্যে মাত্র একটিতে দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা ২০০টিরও কম!
‘ফেটাস ইন ফেটু’ (FIF) কী? কেন এমন হয়?
‘ফেটাস ইন ফেটু’ হলো একটি বিরল জন্মগত অবস্থা, যেখানে একটি অব্যবহৃত যমজ ভ্রূণ অন্য যমজের শরীরের ভিতরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
কীভাবে ঘটে? বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থার একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণের ভিতরে এটি একটি ‘পরজীবী যমজ ভ্রূণ’ হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারে।
বিকল্প মত: এটি এক ধরনের বিরল জীবাণু কোষ টিউমার বা ‘টেরাটোমা’ হতে পারে। টেরাটোমায় দাঁত, চুল, হাড় এবং পেশী সহ অপরিণত টিস্যু থাকতে পারে।
বিশেষত্ব: এই ‘পরজীবী’ ভ্রূণটি স্বাধীনভাবে বাড়তে পারে না। এটি সাধারণত সদ্যোজাতের পেটে একটি পিণ্ডের আকারে দেখা যায় এবং গর্ভস্থ অঙ্গের চাপের কারণে বিকৃত হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক অতীতে, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রের বুলধানা-তেও এক সদ্যোজাতের পেটে দুটি ভ্রূণ পাওয়া গিয়েছিল।
পরবর্তী পদক্ষেপ: জরুরি অস্ত্রোপচার অপরিহার্য
KIMS-এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সদ্যোজাতটির দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য অস্ত্রোপচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিতামাতার সম্মতি সাপেক্ষে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেটের ভেতরের এই পরজীবী যমজ শিশুটিকে অপসারণ করা হবে।
ডাক্তাররা জোর দিয়ে বলেছেন, কিছু সম্ভাব্য জটিলতা থাকা সত্ত্বেও, নবজাতকের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে এই অস্ত্রোপচার অত্যাবশ্যক। এই বিরল ঘটনা ইতিমধ্যে বৃহত্তর চিকিৎসাবিজ্ঞানী মহলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।