২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘর্ষ এবং ২০ জন ভারতীয় সেনার শহিদ হওয়া প্রসঙ্গে মন্তব্য করায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে কড়া ভর্ৎসনা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি এজি মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চ রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে। যদিও আদালত আপাতত ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে।
রাহুল গান্ধী তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ চলাকালীন দাবি করেছিলেন যে, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর চীন নাকি ভারতের প্রায় ২,০০০ বর্গ কিলোমিটার জমি দখল করে নিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, এই বিষয়ে মোদি সরকার “আত্মসমর্পণ” করেছে। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে।
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাহুলকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, “আপনি কীভাবে জানলেন যে চীন ২,০০০ বর্গ কিলোমিটার জমি দখল করেছে? আপনি কি সেখানে উপস্থিত ছিলেন? আপনার কাছে কি কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ আছে?” বিচারপতি দত্ত আরও বলেন, “যদি আপনি সত্যিকারের ভারতীয় হন, তাহলে আপনার এ ধরনের মন্তব্য করার কথা নয়।”
রাহুল গান্ধীর আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতের কাছে যুক্তি দেন, “যদি এসব কথা বলাই না যায়, তাহলে তিনি কীভাবে বিরোধী দলনেতা হিসেবে কাজ করবেন?” এর উত্তরে বিচারপতি দত্ত স্পষ্ট করে বলেন, “তাহলে আপনি সংসদে গিয়ে বলুন।”
যদিও আদালত আপাতত মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে এবং রাহুল গান্ধীর পক্ষ থেকে মামলাটি খারিজ করার আর্জির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিস জারি করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রাহুলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি ফৌজদারি মামলার সমন খারিজের আর্জি নাকচ করে দিয়েছিল। সেই মামলার অভিযোগ ছিল, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাহুল সেনাবাহিনী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। লখনউয়ের উদয়শঙ্কর শ্রীবাস্তব নামে এক ব্যক্তি এই অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাহুল গান্ধী চীন-সংক্রান্ত মন্তব্যে সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছেন।
রাহুল অবশ্য বরাবরই দাবি করে এসেছেন যে, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি একাধিকবার বলেছেন, “সরকার চীন জমি দখল করেছে এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।” তিনি সরকারের নরম অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “চীনের সঙ্গে কড়া ভাষায় কথা বলা উচিত এবং তাদের জানিয়ে দেওয়া উচিত যে তারা ভারতের জমিতে বসে আছে— যা আমরা কখনও বরদাস্ত করব না।”
বিজেপি অবশ্য রাহুলের এই মন্তব্যের পাল্টা সমালোচনা করে বলেছে যে, রাহুল গান্ধী “স্থায়ীভাবে বিভ্রান্ত” এবং তাঁর বক্তব্যে চীনের কাছে আত্মসমর্পণের মানসিকতা প্রকাশ পায়, যা তাঁর দল কংগ্রেস অতীতেও দেখিয়েছে।