গঙ্গার জলপ্রবাহে সম্প্রতি এক বিশালাকৃতির সরীসৃপকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের নতুন শিবপুর এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে কুমির ভেবে ভয় পেলেও, পরে বন দফতরের আধিকারিকদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি আসলে একটি ‘ঘড়িয়াল’। এই ঘটনায় একদিকে যেমন মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি মৎস্যজীবীদের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে নতুন শিবপুরের গঙ্গায় প্রথম এই প্রাণীকে দেখা যায়। এর আকার এবং উপস্থিতি দেখে গ্রামবাসীরা ও মৎস্যজীবীরা কুমির ভেবে ভীত হয়ে পড়েন। এমনিতেই গঙ্গা ভাঙনের আতঙ্কে বিপর্যস্ত এই এলাকার মানুষ, তার উপর ঘড়িয়ালের উপস্থিতি তাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাঙনের কারণে বহু পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে, আর যারা নদীর পাড়ে বসবাস করেন এবং মাছ ধরে সংসার চালান, তারা এখন গঙ্গায় নামতে ভয় পাচ্ছেন। বিপদ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না নতুন শিবপুর গ্রামের মানুষের।
বন দফতরের তৎপরতা ও সতর্কতা:
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বন দফতরের আধিকারিকরা। বন দফতর সূত্রে জানা গেছে, তারা এলাকার সাধারণ মানুষ এবং মৎস্যজীবীদের মধ্যে ঘড়িয়াল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করছেন। ঘড়িয়ালটি গঙ্গা থেকে না যাওয়া পর্যন্ত নদীতে নামতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, মৎস্যজীবীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। কোনো রকম দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকায় বন দফতরের কর্মীরা মোতায়েন রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
ঘড়িয়াল সম্পর্কে কিছু তথ্য:
ঘড়িয়াল মূলত একটি প্রাচীন সরীসৃপ প্রজাতি, যা ‘মেছো কুমির’ বা ‘ঘট কুমির’ নামেও পরিচিত। এর প্রধান খাদ্য মাছ, সম্ভবত এই কারণেই এর এই নামকরণ। কারো কারো মতে, এর মাথা ও তুন্ড (মুখ) দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মতো বলে এর নাম ‘ঘড়িয়াল’ হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এর তুন্ডের শেষ প্রান্তে কোমল হাড় দিয়ে তৈরি একটি ঘড়ার মতো অষ্টভুজাকার অংশ থাকে, যা থেকে ‘ঘড়া’ শব্দ থেকে ‘ঘড়িয়াল’ নামটি এসেছে।
এই ঘড়িয়ালটির উপস্থিতি নতুন শিবপুর গ্রামের মানুষের জীবনে আরও একটি অনিশ্চয়তা যোগ করেছে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে এই বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি – সব মিলিয়ে স্থানীয়দের সংগ্রাম আরও তীব্র হচ্ছে।