যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে, সেখানে হাওড়ার গঙ্গাধরপুর বিবেকানন্দ গ্রন্থাগার এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রায় চার দশক ধরে এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে থাকছে নামি কোম্পানির ওষুধও। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের কাছে এটি এক দারুণ ভরসা হয়ে উঠেছে।
এক সময় গঙ্গাধরপুর এবং তার আশেপাশের ১৫-২০টি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা ছিল প্রায় স্বপ্নের মতো। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর যখন গ্রামের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, তখন দু’বেলা খাবার জোগানোই কঠিন ছিল। এমন অবস্থায় সামান্য জ্বর-জ্বালা বা অন্য রোগের চিকিৎসার খরচ বহন করা ছিল প্রায় অসম্ভব। এই দুরবস্থা দেখে কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে গঙ্গাধরপুর বিবেকানন্দ গ্রন্থাগারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথম দিকে সীমিত পরিসরে শুরু হলেও, ২০০০ সালের পর হাওড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় এই পরিষেবা আরও উন্নত হয়। বিশিষ্ট চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমানে প্রতি মাসে দু’দিন করে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী এই পরিষেবা গ্রহণ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এখানে হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি এবং চোখের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা মানুষের কাছে একে আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।
প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক সুজিত কুমার মান্না জানান, এক সময় গ্রন্থাগারটি শিক্ষাক্ষেত্রে আলো ছড়ানোর জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চিকিৎসা পরিষেবার গুরুত্ব বেড়েছে এবং গ্রন্থাগারটি তার ভূমিকা প্রসারিত করেছে। একই কথা বলেন সংগঠনের সম্পাদক ডাঃ আশীষ ঘোষ। তিনি জানান, দরিদ্র পরিবারের মানুষের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়াটা এই পরিষেবার এক বড় দিক। ১৫ দিন পর পর বহু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন।
আজ যেখানে একজন সাধারণ চিকিৎসক দেখাতে গেলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়, সেখানে মাত্র ২০ টাকায় চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়ার এই সুবিধা এলাকার হতদরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। চিকিৎসা না পেয়ে অকালে প্রাণ হারানোর ঘটনা এখন এই এলাকায় অনেকটাই কমেছে। গঙ্গাধরপুর বিবেকানন্দ গ্রন্থাগারের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে সঠিক পরিকল্পনা এবং মানবিক উদ্যোগ থাকলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছেও উন্নত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।