কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও কোথাও বন্ধ স্টেশন, যাত্রী ভোগান্তির শীর্ষে মেট্রো, আর কতদিন?

দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত মেট্রো স্টেশন কবি সুভাষ (নিউ গড়িয়া) বন্ধ থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গত ২৮ জুলাই থেকে প্ল্যাটফর্মের পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় স্টেশনটির বাণিজ্যিক পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনকে নতুন টার্মিনাল স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু এর ফলে মেট্রো পরিষেবায় নেমে এসেছে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা।

সোমবার সকালে নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এই বিশৃঙ্খলা আরও চরমে পৌঁছয়। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে শহিদ ক্ষুদিরামমুখী মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকায় দমদম থেকে দক্ষিণমুখী পরিষেবা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীর ভিড় উপচে পড়ে, ফলে অনেকেই বিকল্প পরিবহনের খোঁজে স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, কবি সুভাষ বন্ধ হওয়ার পর থেকে মেট্রো পরিষেবা আর আগের মতো নির্ভরযোগ্য নেই। এক যাত্রী জানান, “আগে চাঁদনি চক থেকে কবি নজরুল যেতে যে সময় লাগতো, এখন তার থেকে প্রায় ২০ মিনিট বেশি সময় লাগছে। গীতাঞ্জলি স্টেশনে ১০ মিনিট ধরে আটকে ছিলাম।” আরেক যাত্রী বলেন, প্ল্যাটফর্মে যে সময় দেখানো হচ্ছে, তার সঙ্গে ট্রেনের আসার সময়ের কোনো মিল নেই, ফলে ভোগান্তি আরও বাড়ছে।

এই সমস্যার প্রধান কারণ হলো শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনের পরিবর্তিত ব্যবস্থা। আগে কবি সুভাষে ট্রেন যাত্রীদের নামিয়ে কারশেডের দিকে ট্র্যাক বদল করত এবং দ্রুত উত্তরমুখী যাত্রা শুরু করত। এতে পিছনের ট্রেনগুলো সহজেই স্টেশনে ঢুকতে পারত। কিন্তু এখন শহিদ ক্ষুদিরামে ট্রেনকে দীর্ঘ সময় ধরে ট্র্যাক বদলানোর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। একটি ট্রেন ট্র্যাক বদল না করা পর্যন্ত অন্য কোনো ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে পারছে না, যার ফলে পুরো পরিষেবাতেই বিলম্ব হচ্ছে।

মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য শহিদ ক্ষুদিরামে একটি নতুন ক্রসওভার পয়েন্ট তৈরি করার কাজ চলছে। সিগন্যালিং, বৈদ্যুতিক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে। তবে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমাধানেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর আওতায় কিছু নিউ গড়িয়ামুখী ট্রেন মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে ট্র্যাক বদল করে উত্তরমুখী হবে, আর বাকি ট্রেনগুলি যাবে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত।

একসময় কলকাতা মেট্রো তার নির্ভরযোগ্যতার জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু কবি সুভাষ স্টেশন বন্ধ হওয়ার পর থেকে সেই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এখন মেট্রো কর্তৃপক্ষ কত দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy