কলার ভেলায় রোগী পরিবহন, জনজীবনে চরম দুর্ভোগ, উন্নয়নের প্রশ্ন বাংলার এই গ্রামে

লাগাতার ভারী বর্ষণে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া ব্লকের একাধিক গ্রাম এখন পুরোপুরি জলমগ্ন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, গ্রামবাসীরা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন কলাগাছের তৈরি ভেলায় শুইয়ে! এই মর্মান্তিক দৃশ্য সামনে আসার পর থেকেই রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং ‘উন্নয়ন’ নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, ‘এটাই কি এগিয়ে বাংলার নমুনা?’

বাদুড়িয়ার চাতরা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মির্জাপুর, পাপিলা, কোটালবেড়িয়া, রসুই এবং পোতাপাড়া গ্রামের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এই গ্রামগুলি সম্পূর্ণ জলমগ্ন। কোথাও এক হাঁটু, আবার কোথাও এক বুক পর্যন্ত জল জমেছে। চাষের জমি পুরোপুরি জলের নিচে চলে গেছে এবং অনেক বাড়িতেও জল ঢুকে পড়েছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে জলের স্তর আরও বাড়ছে, যা বিপর্যস্ত জনজীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। গ্রামবাসীরা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি না কমলে এই জল নামবে না।

এই চরম দুর্ভোগের মধ্যেই সামনে এসেছে ভয়াবহ একটি ছবি: একটি কলাগাছের ভেলাকে নৌকা বানিয়ে তার উপর রোগীকে শুইয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেলাইনের বোতল ধরে রেখেছেন একজন, আর কয়েকজন মিলে ভেলা ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু রোগীই নয়, এই জল পেরিয়েই এলাকার কচিকাঁচাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে, সেই ছবিও দেখা গেছে, যা দেখে শিউরে উঠছেন অনেকেই।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা:

গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, একের পর এক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না। চাষের জমি জলের তলায় চলে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এছাড়াও, সাপ-পোকামাকড়ের উৎপাত বেড়েছে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, এই দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনের কোনো সদর্থক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। গ্রামবাসীদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে বর্ষায় এই এলাকার এমনই হাল হয়, অথচ সরকার বা স্থানীয় পঞ্চায়েত কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়নি। তারা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন।

স্থানীয় পঞ্চায়েতের দাবি:

এদিকে, স্থানীয় পঞ্চায়েতের দাবি, এই এলাকার আশপাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি, যমুনা এবং পদ্মার নাব্যতা কমে গেছে। ফলে নদীর জলধারণ ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে, যার কারণে দুই দিক প্লাবিত হচ্ছে। তবে এই যুক্তি মেনে নিতে রাজি নন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা, যারা প্রতি বছর একই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এই ঘটনা আবারও গ্রামীণ পরিকাঠামোর দুর্বলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy