কবিগুরুর ছাপাখানা ‘দ্য লিঙ্কন প্রেস’ বন্ধ, শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ভবন জীর্ণ, পুনরুদ্ধারের দাবি বিশ্বভারতীতে

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বোলপুর-শান্তিনিকেতনে যেন ‘প্রদীপের তলায় অন্ধকার’। ইউনেসকো দ্বারা ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তকমা প্রাপ্ত এই স্থানটিতে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত অন্যতম স্থান, শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী ছাপাখানাটি কয়েক বছর ধরেই বন্ধ। ফলে, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

ছাপাখানার ইতিহাস: আমেরিকার উপহার

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ছাপাখানার ইতিহাস সুদূর আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত:

  • উপহার: ১৯১৭ সালের ৮ জানুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমেরিকার নেব্রাস্কা স্টেটের লিঙ্কন শহরে ‘ন্যাশনালিজম’-এর ওপর বক্তৃতা দেওয়ার দিন সেখানকার বাসিন্দারা তাঁকে একটি মুদ্রণযন্ত্র উপহার দেন।

  • নামকরণ: এই যন্ত্রটির নাম ছিল ‘দ্য লিঙ্কন প্রেস’। যন্ত্রটির গায়ে খোদাই করা ছিল ‘প্রেজেন্টেড টু দ্য বয়েজ় অব শান্তিনিকেতন’। এরপরই শান্তিনিকেতনের ছাপাখানা গড়ে ওঠে।

  • প্রথম বই: ১৩২৫ বঙ্গাব্দের আশ্বিন (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে) শান্তিনিকেতন প্রেসে মুদ্রিত প্রথম বই প্রকাশিত হয়, যা ছিল রবীন্দ্রনাথের গানের দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা স্বরলিপি-সহ সংকলন ‘গীত-পঞ্চাশিকা’

বন্ধ হওয়ার কারণ ও বর্তমান অবস্থা:

বহু ঘটনার সাক্ষী এই শতাব্দী প্রাচীন ছাপাখানাটি ২০১৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সাতটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাপাখানা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ায় বিশ্বভারতীও এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

  • বন্ধ: ছ’বছর কেটে গেলেও ছাপাখানাটি এখনও বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হওয়ার সময় ম্যানেজার-সহ মোট ৩৯ জন কর্মী সেখানে কর্মরত ছিলেন।

  • যন্ত্রের স্থান: লিঙ্কনের বাসিন্দাদের দেওয়া ঐতিহাসিক মুদ্রণযন্ত্রটি বর্তমানে উত্তরায়ণে কোণার্ক বাড়ির বারান্দায় প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে রাখা হয়েছে।

  • ভবনের অবস্থা: অভিযোগ, ছাপাখানার মূল ভবনটি জীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। ভিতরে থাকা মুদ্রণযন্ত্র ও বই বাঁধানোর জিনিসপত্র নষ্ট হতে বসেছে, কিছু মূল্যবান জিনিস নষ্টও হয়ে গিয়েছে।

বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, “বিশ্বভারতীর প্রেস বন্ধ হলেও আমাদের প্রকাশনা বন্ধ হয়নি। তবে এই ছাপাখানাটি কী করা যায় সে বিষয়েও আগামিদিনে ভাবনাচিন্তা করা হবে।”

সব মিলিয়ে, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই স্থানে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ছাপাখানাটি আবার নিজের ছন্দে ফিরে আসুক এবং কবিগুরুর স্মৃতি রক্ষা পাক—এই আশা করছেন সকলেই।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy