বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর আগে জনতা দল ইউনাইটেড (JDU)-এর অন্দরে তীব্র রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। চারবার গোপালপুর আসন থেকে জেতা এবং সর্বদা বিতর্কে থাকা জেডিইউ বিধায়ক গোপাল মণ্ডল এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। এইবার তাঁর টিকিট কাটা যাওয়ার জোরালো জল্পনা তৈরি হতেই তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, তাঁর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের দরজা বন্ধ থাকে। ‘নো-এন্ট্রি’ পাওয়ার পর গোপাল মণ্ডল প্রতিবাদ জানাতে মুখ্যমন্ত্রী বাসভবনের বাইরেই গামছা পেতে ধরনায় বসেন।
বিতর্কের দীর্ঘ তালিকা
বিহারের রাজনীতিতে গোপাল মণ্ডলের নাম সব সময় শিরোনামে থেকেছে। তাঁর বিতর্কের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। বিগত কয়েক বছরে তিনি দলীয় নীতির বাইরে গিয়ে একাধিক মন্তব্য করে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। কয়েকটি উদাহরণ:
নবরাত্রির সময় তাঁর নাচের এবং এক সমর্থককে চড় মারার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।
তিনি ভাগলপুরের বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে এক মহিলার সঙ্গে কথিত সম্পর্ক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় “কাট্টা (রিভলভার) ও মার্ডার”-এর মতো মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন।
জেডিইউ-এর মহিলা শাখার এক পদাধিকারীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
২০২১ সালে তেজস রাজধানী এক্সপ্রেসে শুধুমাত্র গেঞ্জি ও আন্ডারওয়্যার পরে ঘোরাঘুরির ঘটনায় তাঁর বিতর্ক আরও বাড়ে।
এত বিতর্কের পরেও চারবার লাগাতার জয়লাভ এবং নিজের এলাকায় তাঁর দৃঢ় জনসমর্থন, গোপাল মণ্ডলের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রমাণ করে।
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই গামছা বিছিয়ে ধরনা
সূত্রের খবর, এবার দলীয় নেতৃত্ব তাঁর ক্রমাগত বিতর্কিত মন্তব্যে বিরক্ত ছিল। টিকিট কাটার সম্ভাবনা বুঝতে পেরেই গোপাল মণ্ডল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী বাসভবনের বাইরে গামছা বিছিয়ে বসে ধরনা দেন।
তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব তাঁকে বাধা দিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, আরজেডি ছেড়ে জেডিইউ-তে আসা প্রাক্তন সাংসদ বুলো মণ্ডলকে গোপালপুর আসন থেকে প্রার্থী করার পরিকল্পনা চলছে। সম্প্রতি গোপাল মণ্ডল বুলো মণ্ডলের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেছিলেন, যার ফলে তাঁর টিকিট হারানোর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
জেডিইউ সূত্র বলছে, টিকিটের বিতরণের ক্ষেত্রে দল প্রার্থীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি এবং জেতার সম্ভাবনার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চাইছে। গোপাল মণ্ডলের বিষয়টি কেবল ব্যক্তিগত বিতর্কের নয়, এটি দলের জন্য একটি বার্তাও বহন করছে যে, দলীয় আনুগত্য জরুরি, কিন্তু প্রকাশ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়।