এসআইআর ত্রুটি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক! বীরভূমে ৮০০ বুথ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ শুনলেন বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত

বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের গড়েই এসআইআর (Special Identification Report) প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্তের কাছে। শুক্রবার সিউড়ি জেলা শাসকের সভাকক্ষে আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একাধিক সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সুব্রত গুপ্ত।

বৈঠকে বিশেষ পর্যবেক্ষক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক ধবল জৈন। এদিন সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সমস্যাগুলি লিখিত আকারে গ্রহণ করেন পর্যবেক্ষক।

বিজেপির গুরুতর অভিযোগসমূহ:

বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় একাধিক গুরুতর ত্রুটির কথা তুলে ধরেন:

  • ৮০০ বুথে গড়মিল: তিনি অভিযোগ করেন, বীরভূম জেলার ৩০৭৬টি বুথের মধ্যে ৮০০টি বুথে মৃত, স্থানান্তরিত এবং স্থায়ীভাবে অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারের সংখ্যা খুবই কম দেখানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই বুথগুলিতে ২০ থেকে ২৫ জনের বেশি এমন ভোটার নেই।

  • বিএলও-দের হলফনামা: জগন্নাথবাবু বলেন, জেলায় ৯৯ শতাংশ এনুমারেশন ফর্ম জমা হয়ে গিয়েছে। তাই এখন বিএলও-দের কাছ থেকে হলফনামা নিতে হবে যে তাঁরা সঠিক ভাবে কাজ করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি খসড়া তালিকা প্রকাশের পর ইচ্ছাকৃতভাবে মৃতদের নাম প্রকাশ্যে আসে, তবে দায়ী বিএলও সহ সংশ্লিষ্ট অফিসারেরা শাস্তির মুখে পড়বেন, এমনকি জেলে যাবেন।

  • বংশধরদের নাম বৃদ্ধি: তাঁর অভিযোগ, বীরভূমের প্রতিটি বিধানসভায় বংশধরদের নাম (প্রজেনি লিঙ্ক) দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। তিনি এই বুথগুলি ধরে ধরে পুনরায় তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন ‘এক পক্ষ’ হয়ে কাজ করছে এবং তিনি প্রশাসনের কাজে সন্তুষ্ট নন।

শুনানি পর্ব নিয়ে আবেদন:

বিজেপি নেতা আরও জানান, এরপর শুনানি পর্ব রয়েছে, যেখানে বিধানসভা ভিত্তিক প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে ডাকা হতে পারে, যাদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই এবং যারা প্রজেনি লিঙ্ক দেখিয়ে ফর্ম জমা দিয়েছেন। তিনি পর্যবেক্ষকের কাছে আবেদন করেছেন, শুনানির সময় যাতে পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা হয়, কারণ ওই সময় সকলকে প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

তৃণমূলের বক্তব্য ও উদ্বেগ:

তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র সিউড়ি শহর সভাপতি রাধাবল্লভ চট্টোপাধ্যায় কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন:

  • ২০০২-এর ভোটারদের বাদ পড়া: তিনি জানান, বিধানসভা ভিত্তিক ৩-৪ শতাংশ এমন ভোটার রয়েছেন, যারা ২০০২ সালে ভোট দিয়েছেন কিন্তু বর্তমান তালিকায় তাঁদের নাম নেই।

  • প্রবীণদের আতঙ্ক: তিনি বলেন, কোনো মানুষ মারা না গেলে কিভাবে তাঁদের মৃত দেখানো হবে? ৮০ বছর বয়সী ভোটারদের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে, যা প্রবীণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে।

  • দাবি: তিনি কমিশনের কাছে আবেদন জানান, একটি মৃত ভোটারও যেন তালিকায় না থাকে, কিন্তু একই সঙ্গে কোনো বৈধ ভোটারের নামও যেন বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্তের আশ্বাস:

বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত জানান, “কিছু অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। কাজ ঠিকঠাক এগোচ্ছে।” তিনি আশ্বাস দেন, যে সমস্ত বুথে মৃতের সংখ্যা ঠিকঠাক বাদ দেওয়া যায়নি বলে মনে হবে, সেই সমস্ত বুথে এআরও-রা (Electoral Registration Officer) ব্যক্তিগতভাবে যাবেন। ‘প্রজেনি ভোটার’ নিয়ে সমস্যার কথা উঠলেও তিনি উল্লেখ করেন যে কিছু ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকরা ২০০২ সালের সার্ভের সময় এলাকায় ছিলেন না, যা নতুন করে দেখা হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy