রাজ্যে স্পেশাল আইডেন্টিফিকেশন রিপোর্ট (SIR)-এর কাজ চলাকালীন ফের একবার বিপুল সংখ্যক পরিচয়পত্র উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল। নবদ্বীপের প্রতাপনগরে ভুয়ো ভোটার কার্ড উদ্ধারের রেশ কাটতে না কাটতেই, এবার উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত স্টেশন চত্বর থেকে প্রচুর আধার ও ভোটার কার্ড-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার হলো।
শুক্রবার বারাসত স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন রেললাইনের নর্দমা ও আবর্জনার স্তূপ থেকে এই নথিপত্রগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রেল পুলিশ (GRP)।
কী কী উদ্ধার হলো?
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া নথিপত্রগুলির মধ্যে রয়েছে:
-
ভোটার কার্ড
-
আধার কার্ড
-
রেশন কার্ড
-
প্যান কার্ড
-
কিছু এটিএম কার্ড
কোথা থেকে এই নথিগুলো এখানে এল এবং সেগুলি আসল নাকি ভুয়ো, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বারাসত জিআরপি’র ওসি ধর্মেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া নথিগুলি স্থানীয় নাকি বহিরাগত কারও, সেই বিষয়ে খোঁজ চালানো হচ্ছে। ঘটনার নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য রয়েছে, তারও তদন্ত শুরু হয়েছে।
‘এসআইআর আতঙ্ক’ দেখছেন প্রত্যক্ষদর্শী:
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সুদীপ দাস বলেন, “দেখলাম নর্দমা ও আবর্জনার স্তূপের মধ্যে প্রচুর আধার ও ভোটার কার্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পড়ে রয়েছে। দেখে তো মনে হচ্ছে সবই ভুয়ো। আসল হলে কেউ এভাবে ফেলে যেত না। এসআইআর আতঙ্কেই কেউ এসব ফেলে দিয়ে গিয়েছে। অবৈধ লোকজনকে এদেশ থেকে তাড়াতে এসআইআর চালু হওয়া উচিত।”
রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে:
এই ঘটনা ঘিরে রাজ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
-
বিজেপির অভিযোগ: বিজেপি নেতা প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে যেভাবে ভোটার ও আধার কার্ড-সহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র মিলছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের সুরক্ষা আজ প্রশ্নের মুখে। আমাদের সন্দেহ, এর পিছনে কোনও অসাধু চক্র থাকতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য বেআইনিভাবে আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এর পিছনে শাসক দলের মদত রয়েছে।” তিনি উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানান।
-
তৃণমূলের পালটা জবাব: পাল্টা জবাব দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দেবব্রত পাল। তিনি বলেন, “সবকিছুর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা বিজেপির স্বভাব। এর পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে রেল পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। তদন্ত হলেই সবটা সামনে আসবে। তার আগে এ নিয়ে কিছু বলা উচিত নয়।”
রাজ্যে যখন এসআইআর-এর প্রথম পর্যায়ের ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে জোরকদমে, তখন এই ধরনের নথিপত্র উদ্ধার রাজ্যের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে বড় প্রশ্ন তুলে দিল।