ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হতেই কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি এই প্রক্রিয়াকে বাংলায় ‘এনআরসি চাপানোর বন্দোবস্ত’ বলে তীব্র অভিযোগ করেন।
‘বাংলা ছাড়া আর কোথায় নয় কেন?’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল SIR-এর একপেশে প্রয়োগ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত লাগোয়া পাঁচটি রাজ্য থাকা সত্ত্বেও SIR চালু হলো কেবলমাত্র বাংলায়।
তাঁর অভিযোগ: “বাংলাদেশ সীমান্ত ভাগ করে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অসম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রয়েছে। মায়ানমারের সীমান্ত লাগোয়া মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ। তাহলে যদি সত্যিই অনুপ্রবেশ রোধই লক্ষ্য হয়, তাহলে সেখানে এই নিবিড় সংশোধন হচ্ছে না কেন?”
বাঙালিকে অপমান: অভিষেক বলেন, “শুধুই বাংলাকে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে এই পদক্ষেপ। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য বাঙালিকে ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা।”
বিজেপি-শাসিত রাজ্য অসমকে বাদ দেওয়ায় কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
SIR মানে ‘সাইলেন্ট ইনভিসিবলে রিগিং’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় SIR প্রক্রিয়ার সময়সীমা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এটিকে ভোটার তালিকায় চুপিচুপি কারচুপি করার মাধ্যম বলে ব্যাখ্যা করেন।
অভিষেকের কটাক্ষ: তিনি বলেন, “আমি বলি, SIR-এর আসল মানে ‘সাইলেন্ট ইনভিসিবলে রিগিং’ (Silent Invisible Rigging)।”
সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন: আগে যেখানে এই ধরনের সংশোধন করতে দুই বছর সময় লেগেছিল, সেখানে এবার মাত্র দু’মাসের মধ্যে কীভাবে এই কাজ সম্ভব, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
দিল্লিতে কমিশন অফিস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চুপ করে বসে থাকবে না। গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির ওপর আঘাত করা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চূড়ান্ত হুমকি: তিনি ঘোষণা করেন, “একজন বৈধ ভোটারের নামও যদি তালিকা থেকে বাদ যায়, তাহলে বাংলার এক লক্ষ মানুষ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করবে। দিল্লি পুলিশ এসে আটকাতে চাইলে আটকে দেখাক।”
ভোটার তালিকার বৈধতা: তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, সেই তালিকা ভুল হলে তাঁদের আগে ইস্তফা দেওয়া উচিত।
অভিষেকের এই আক্রমণাত্মক বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, SIR প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।