ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘ টানাপোড়েনে যখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির মানচিত্র দ্রুত পাল্টাচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটেই বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জোরালোভাবে জানালেন, বিশ্ব মঞ্চে ভারত নিরপেক্ষ (Neutral) নয়, বরং ভারত দৃঢ়ভাবে শান্তির পক্ষে (Pro-Peace)।
নয়াদিল্লিতে পুতিন এবং রুশ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানানোর সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ইউক্রেন সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকেই দুই রাষ্ট্র প্রধান ‘নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে’ রয়েছেন। মোদী রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন যে, তারা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ও সংঘাতের পরিস্থিতি ভারতকে জানিয়ে এসেছে। মোদীর কথায়, “আপনারা শুরু থেকেই আমাদের বিশ্বাস করেছেন, প্রতিটি বিষয় জানিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি—বিশ্বাসই দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
শান্তির পথেই মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ:
প্রধানমন্ত্রী মোদী এদিন পুনর্ব্যক্ত করেন, আন্তর্জাতিক সঙ্কটের সমাধান কেবল সামরিক শক্তি প্রয়োগে সম্ভব নয়, বরং আলোচনার পথেই তা সম্ভব। তাঁর ভাষায়, “ভারত শান্তিতে বিশ্বাস করে। শান্তির পথেই জাতিগুলোর কল্যাণ। সেই পথেই মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ। আমরা সবসময় সেই পথের পক্ষেই দাঁড়াই।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সাম্প্রতিক কিছু ইতিবাচক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিশ্বকে আবার শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে পারে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গভীরতা:
মোদী বৈঠকে উল্লেখ করেন, ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক কেবল কৌশলগত অংশীদারিত্ব নয়, এটি দশকের পর দশক ধরে গড়ে ওঠা গভীর আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর দাঁড়িয়ে। তিনি রুশ প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আজকের ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক আপনার (পুতিনের) সুদীর্ঘ কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির ফল। এই সম্পর্ক স্থায়িত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।”
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনও মোদীর উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান। তিনি নিশ্চিত করেন, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি-সমাধানের পথে রাশিয়া কাজ করে চলেছে এবং সংলাপের দরজা এখনও খোলা রয়েছে।
মোদীর এই বার্তাটি একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক কৌশল—’নিরপেক্ষতা’র ধারণা ঝেড়ে ফেলে ‘শান্তির পক্ষপাতী মধ্যস্থতা’র পরিচয়কে সামনে আনছে দিল্লি, যা বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের প্রতিফলন।