আর অনুমানে কীটনাশক নয়! স্মার্ট যুগে চাষিদের পাশে CMERI-র বিজ্ঞানীরা, ড্রোন-রোবটে হবে ফসলের রোগ নির্ণয়

দেশের কৃষকদের সনাতনী অনুমানের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন দুর্গাপুরের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার সিএমইআরআই-এর বিজ্ঞানীরা। এখন থেকে চাষিরা তাঁদের ফসলের রোগ নির্ণয় করতে পারবেন বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে, যা কীটনাশকের অপব্যবহার কমিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে। সিএমইআরআই (CMERI) বিজ্ঞানীরা শুধু কৃষি নয়, ‘স্মার্ট ভিলেজ’ গড়ার লক্ষ্যে একগুচ্ছ যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন।

কীটনাশকের অপব্যবহার রুখতে নতুন প্রযুক্তি
সিএমইআরআই সূত্রে জানা গেছে, অনেক সময় কৃষকরা অনুমানের ভিত্তিতে জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেন, যা ফসলের পাশাপাশি মানব শরীরেও কুপ্রভাব ফেলে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই বিজ্ঞানীরা এই নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন।

দুর্গাপুর সিএমইআরআই-এর ডিরেক্টর নরেশ চন্দ্র মুর্মু জানান, এবার বিশেষ অত্যাধুনিক যন্ত্রই নির্ণয় করবে মাঠের ফসলের রোগ, যা চাষাবাদে উপযুক্ত পরিমাণে ওষুধ ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে সাহায্য করবে।

স্মার্ট ভিলেজ এবং খাদ্যসঙ্কট মোকাবিলা
নরেশ চন্দ্র মুর্মু উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, বর্তমান প্রজন্ম ধান, গম ও শাকসব্জী চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছে না এবং গ্রামের অনুকূল পরিবেশের গুরুত্ব বুঝেও উঠতে পারছে না। তাঁর মূল দাবি, গ্রামকে উন্নত করতেই হবে, না হলে ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর খাদ্যসঙ্কট তৈরি হবে।

সিএমইআরআই বিজ্ঞানীরা এই বর্তমান প্রজন্মকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে গ্রামে খাদ্যের অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে। এই লক্ষ্যেই তাঁরা ‘স্মার্ট ভিলেজ’ গড়তে নিম্নলিখিত বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন:

কৃষি রোবট ও ড্রোন: বিজ্ঞানীরা এমন রোবট বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, যাকে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করে চাষ করাতে পারবে। পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহার করে জমির কোন অংশে পোকা আক্রমণ করেছে, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যাবে।

সোলার চুলা: আধুনিক ভারতের গ্রামের ঘরে ঘরে থাকবে স্মার্ট সোলার চুলা। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রান্না করার মেশিনও তৈরি করেছেন সিএমইআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা।

উচ্চশিক্ষিতদের কৃষিতে আগ্রহ বৃদ্ধি
বিজ্ঞানীদের দাবি, মানবজাতি এখন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে। সকলে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছেন, ফলে বহু জমিতে চাষ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের লক্ষ্য হলো, কৃষিকাজকে এমন এক আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যাতে উচ্চ শিক্ষিত যুবকরাও পূর্বপুরুষদের জমিতে চাষ করার আগ্রহ পান।

প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরের এই কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই কৃষিজ যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের উপর জোর দেয়। দেশের আধুনিক ট্রাক্টর নির্মাণ হয়েছিল এই গবেষণাগার থেকেই। বিজ্ঞানীদের বার্তা স্পষ্ট: খাদ্যশস্য উৎপাদন শহরে হয় না, তাই একটা সময় আবার মানুষকে গ্রামে ফিরতে হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy