আমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার (Air India Crash) তদন্তে প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়ে নতুন করে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশের পাইলটদের সংগঠন এয়ারলাইন পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (ALPA India) অভিযোগ করেছে, বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত দফতরের (AAIB) প্রকাশিত এই প্রাথমিক রিপোর্টটি তাড়াহুড়ো করে তৈরি এবং এর ভাষা এমন যে তা ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি করছে।
গত জুন মাসে এই দুর্ঘটনায় ২৬০ জন যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। শুক্রবার দিল্লিতে AAIB-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের অসন্তোষ স্পষ্ট জানায় পাইলট সংগঠন।
‘দায় চাপানো নয়, তথ্য তুলে ধরুন’
ALPA-র প্রতিনিধি স্যাম থমাস অভিযোগ করেন, “সবাই একে অপরকে দায়ী করতে চাইছে। প্রচুর চাপের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আসল কাজ ছিল তথ্য তুলে ধরা, দায় চাপানো নয়।” তিনি রিপোর্টে কোনও স্বাক্ষর না থাকার বিষয়টিও প্রশ্ন তোলেন।
পাইলট সংগঠন আরও দাবি করেছে, রিপোর্টে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR)-এর অডিও উদ্ধৃত করার ধরন বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং তা নিয়ে অযথা জল্পনা ছড়াচ্ছে। প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই ALPA অভিযোগ করে আসছে যে, গোটা তদন্তের রূপরেখা এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যাতে অভিজ্ঞ পাইলটদেরই দোষী বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক রিপোর্টে কী ছিল?
গত জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, আমেদাবাদ থেকে ওড়ার তিন সেকেন্ড পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানের দুই ইঞ্জিনে জ্বালানির যোগান হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এক সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ “রান” থেকে “কাট-অফ” অবস্থায় চলে যায়।
রিপোর্টে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়া কথোপকথনও উল্লেখ করা হয়— যেখানে এক পাইলট অপরজনকে জিজ্ঞেস করেন কেন জ্বালানি কেটে দিলেন, এবং অন্য পাইলট উত্তর দেন, তিনি দেননি। তবে রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়নি, ওই সুইচ বদল অনিচ্ছাকৃত ছিল, নাকি ইচ্ছে করে করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টেও জল্পনা ‘দুর্ভাগ্যজনক’
এদিকে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, পাইলটের ‘ফুয়েল কাট-অফ’কে কেন্দ্র করে ওঠা জল্পনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছিল। অ্যাভিয়েশন সেফটি সংস্থা সেফটি ম্যাটার্স ফাউন্ডেশন কর্তৃক দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, প্রাথমিক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছে এবং নাগরিকদের সত্য তথ্য জানার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
দুর্ঘটনার সময় বিমানটি চালাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ পাইলট সুমিত সাবরওয়াল (উড়ান অভিজ্ঞতা ১৫,৬৩৮ ঘণ্টা) এবং তাঁর সহ-পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্দর (উড়ান অভিজ্ঞতা ৩,৪০৩ ঘণ্টা)।