‘আমি সুন্দর বাচ্চাদের ঘৃণা করি’- MA, B.Ed. পাশ মায়ের স্বীকারোক্তি! ২ বছরে ৪ শিশু খুন, শিউরে উঠল দেশ

হরিয়ানার পানিপথ জেলার নৌলথা ও সিওয়াহ গ্রামে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। গত দু’বছরে চার-চারটি শিশু হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন এক শিক্ষিত মহিলা পুনম (৩২)। মৃত শিশুদের মধ্যে রয়েছে তার নিজের তিন বছরের পুত্র সন্তান শুভমও। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুনমের মুখে যে শীতল সত্য বেরিয়ে এসেছে, তা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদেরও হতবাক করে দিয়েছে— “আমি সুন্দর বাচ্চাদের ঘৃণা করি।”

শিক্ষিত, শান্ত স্বভাবের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ‘সাইকো কিলার’

এম.এ. ও বি.এড. ডিগ্রিধারী পুনমকে পরিবার এবং প্রতিবেশীরা একসময় বুদ্ধিমতী ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে হিসেবেই চিনতেন। কিন্তু পুলিশের জেরার মুখে বেরিয়ে আসে তার বিকৃত মানসিকতার ছাপ। পুলিশ ধারণা করছে, নিছক ঈর্ষা, লুকোনো ঘৃণা এবং গভীর মনোরোগই তাকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

স্বজনদের বয়ান অনুযায়ী, বিয়ের আগে পুনমকে স্বাভাবিকই মনে হলেও বিয়ের পর তার আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। একবার বিধির মুখে গরম চা ছুঁড়ে দিতে গিয়েও আটকানো হয়েছিল তাকে। পুনমের মা সুনীতা দেবী জানান, “বিয়ের পর ও আর আগের মতো ছিল না। মনে হতো যেন অন্য কেউ তার শরীরে ঢুকে পড়েছে।”

নিজের সন্তানকে খুন: সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকার কৌশল?

২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ঘটে প্রথম দুটি খুন। আত্মীয়ের ভিড়ে লুকিয়ে পুনম প্রথমে ১১ বছরের ঈশিকাকে জলের ট্যাঙ্কে ডুবিয়ে হত্যা করে। এরপর নিজের ওপর থেকে সমস্ত সন্দেহ দূর করতে ঠিক একইভাবে খুন করে তার নিজের তিন বছরের ছেলে শুভমকে। পরিবার এই দুটি মৃত্যুকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেয়। কে-ই বা ভাবতে পারত, একজন মা নিজের সন্তানকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে?

এরপর চলতি বছরের ১৮ অগাস্ট সিওয়াহ গ্রামে পুনমের শিকার হয় আরও এক শিশুকন্যা, জিয়া। গবাদি পশুর খোঁয়াড়ে নিয়ে গিয়ে জলে ডুবিয়ে তাকেও শেষ করে দেওয়া হয়। যদিও সেবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছিল পুনম।

চতুর্থ খুন: যখন ফাঁস হলো সব রহস্য

হত্যাকাণ্ডগুলো প্রকাশ্যে আসে গত ১ ডিসেম্বর। ওই দিন ৬ বছরের শিশুকন্যা বিধিকে স্টোররুমে নিয়ে গিয়ে জলের ড্রামে ডুবিয়ে হত্যা করে পুনম। একই কায়দায় পরপর চারটি মৃত্যু ঘটায় পরিবারের সন্দেহ এবার আর চাপা থাকেনি। এর পরেই শুরু হয় পুলিশের তদন্ত এবং পুনমের স্বীকারোক্তি।

পানিপথ পুলিশের এসপি ভূপেন্দ্র সিং জানান, পুনমের আচরণে গভীর মনোরোগ, ঈর্ষা এবং অদ্ভুত মানসিক বিকৃতির স্পষ্ট ছাপ দেখা গেছে। সুন্দর শিশুদের প্রতি ঘৃণা থেকেই সে এমন কাজ করেছে বলে প্রাথমিক ধারণা।

নির্মমতা ও মানবতার এক বিরল ছবি

এই নারকীয় ঘটনার মাঝেও ফুটে উঠেছে এক মানবিক দিক। যে বিধির ঘাতক পুনম, সেই পুনমেরই দুই বছরের ছেলেকে এখন নিজের কাছে রেখে দুধ খাইয়ে মানুষ করছেন বিধির মা। একদিকে এক মা নিজের সন্তানের ঘাতক, অন্যদিকে আরেকজন মা ঘাতকের সন্তানের রক্ষক— নির্মমতা ও মানবতার এই বিরল মিশ্র ছবিই স্তম্ভিত করেছে সবাইকে। পুনমের স্বামী নবীন তার কৃতকর্মের জন্য কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy