“আমি আগেই বলেছি, দিদি যেদিন বলবেন…?”-চিফ হুইপ পদে ইস্তফা দিয়ে যা বললেন কল্যাণ ব্যানার্জি

লোকসভায় তৃণমূলের চিফ হুইপের পদ থেকে আচমকাই ইস্তফা দিলেন বর্ষীয়ান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে TMC সাংসদদের একটি বৈঠকের পরপরই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আসে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন বড় সিদ্ধান্ত? এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই সিদ্ধান্তের কারণ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মমতাদি আজ অভিযোগ করেছেন যে লোকসভায় দলের কো-অর্ডিনেশন ভালো হচ্ছে না। তার মানে আঙুল তো আমার দিকে। আমি তার মানে দোষী। তাই আমি রিজাইন করে দিলাম।”

লোকসভায় দলের কার্যকারিতা নিয়ে স্পষ্টভাবে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ। তাঁর অভিযোগের আঙুল সতীর্থ সাংসদদের দিকেই। তিনি বলেন, “আমাকে যদি বলা হয় রোজ থাকতে হবে, এদিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নেই, কাকলি (ঘোষ দস্তিদার) থাকেন না। আমাকে রাজ্যের অনেক মামলা দেখতে হয়, আবার আমাকে সংসদেও থাকতে হবে, এটা তো হয় না! কেউ থাকে না হাউজে। কেউ কেউ শাড়ি পরে আসে, দুটো গল্প করে চলে যায়।” এই মন্তব্যগুলি সংসদের ভিতরে তৃণমূল সাংসদদের উপস্থিতির অভাব এবং কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাদানুবাদ যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। মহুয়ার সঙ্গে বিরোধই কি এই ইস্তফার মূল কারণ? এই প্রশ্নের উত্তরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “দলকে জানিয়েছি, দল কোনো পদক্ষেপ না নিয়েই আমাকেই দোষারোপ করছে। তাই নিজেই ইস্তফা দিয়ে দিলাম।” তাঁর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, দল তাঁকে সমর্থন না করায় তিনি ক্ষুব্ধ।

উল্লেখ্য, এদিন এক্স (টুইটার) পোস্টে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মহুয়া মৈত্রকে আক্রমণ করে লেখেন, “মহুয়া মৈত্র একজন সহকর্মী সাংসদকে ‘শুয়োর’ বলে তুলনা করেছেন। এই ভাষা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি সমস্তরকম শালীনতারও পরিপন্থী।” এই পোস্ট থেকে মহুয়া-কল্যাণ বিতর্কের রেশ যে এখনও কাটেনি, তা পরিষ্কার।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি আগেই বলেছি, দিদি যেদিন বলবেন, সেদিনই দল ছেড়ে চলে যাব। উনি আজ বলেছেন লোকসভায় কো-অর্ডিনেশন নেই। এর আগে সুদীপ দেখতেন। তিনি চুপ করে বসে থাকতেন, কাকলি মাঝেমধ্যে থাকেন, মাঝেমধ্যে থাকেন না।” তাঁর এই কথায় দলনেত্রীর প্রতি একধরণের অভিমান ফুটে উঠেছে।

কল্যাণের দাবি, এদিনের বৈঠকে লোকসভায় সাংসদদের মধ্যে ঝগড়া, বিবাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলনেত্রী। তার জবাবেই যেন অভিমানে ভেঙে পড়েন কল্যাণ। তিনি বলেন, “দিদি বলেছেন, লোকসভায় ঝগড়া করছি কেন?” এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর পদত্যাগ আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এদিনের বৈঠকেই লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতার পদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও জল্পনার আবহাওয়া তৈরি হলেও, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন অভিষেকের সঙ্গে তাঁর বিন্দুমাত্র তিক্ততা নেই। উল্টে তিনি বলেন, “অভিষেকের সঙ্গে আমার আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং ওর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। এর সঙ্গে অভিষেকের কোনো সম্পর্ক নেই।” কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ইস্তফা এবং তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্যগুলো লোকসভায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণকে কতটা প্রভাবিত করবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy