‘কুকথা’ বিতর্কে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুললেন সিপিএম নেতা ও আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও অনুব্রত মণ্ডল এখনও পুলিশের তলবে সাড়া দেননি, অথচ পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করছে না—এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে কি তাকে আড়াল করা হচ্ছে?
অনুব্রতর ‘কুকথা’ এবং পুলিশের নীরবতা
সম্প্রতি এক জনসভায় বিতর্কিত ‘কুকথা’ বলার অভিযোগ ওঠে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও, পুলিশ কার্যত হাত গুটিয়ে বসে আছে। দু’বার তলব করা সত্ত্বেও অনুব্রত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজিরা দেননি। একজন আইসি-কে কদর্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অনুব্রত এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যেখানে তৃণমূলের ছাত্রনেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সাসপেন্ড করা হচ্ছে, সেখানে অনুব্রতকে কেবল ‘ক্ষমা’ করেই কি রেহাই দেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্নও উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, “অনুব্রতর মাথায় মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর হাত আছে, তাই পুলিশ পদক্ষেপ করতে ভয় পাচ্ছে।” তার এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
বীরভূমে কি ক্ষমতার হাতবদল?
অন্যদিকে, অনুব্রতর এই বিতর্কের আবহে বীরভূমের তৃণমূলের অন্দরে ক্ষমতার হাতবদল হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। সাঁইথিয়ার বনগ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান ও প্রায় ১০০ জন দলীয় কর্মী অনুব্রত মণ্ডলের ওপর থেকে আস্থা সরিয়ে কাজল শেখের নেতৃত্বে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রান্তিকে কাজল শেখের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে তারা অনুব্রতর পরিবর্তে কাজল শেখের নির্দেশেই কাজ করবেন।
এই ঘটনা বীরভূমের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এনেছে। এতদিন অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন বীরভূমে তৃণমূলের শেষ কথা। কিন্তু তার লাগাতার বিতর্ক এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সম্ভবত দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি করেছে। কাজল শেখের দিকে এই গণ-সমর্থন অনুব্রতর জন্য একটি বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
পুলিশ কি আদৌ সক্রিয় হবে?
অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমলেও পুলিশের নীরবতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও বটে। তার নীরবতা অনুব্রতর প্রতি তার সমর্থনকেই কি ইঙ্গিত করছে? নাকি পরিস্থিতির চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে সক্রিয় হতে দেখা যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।