মার্কিন মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এবার নিজেদের সরকার-নিয়ন্ত্রিত ‘ম্যাক্স’ অ্যাপ বাধ্যতামূলক করতে চলেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই নতুন পদক্ষেপকে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন এবং নাগরিকদের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ানোর চেষ্টা বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রথমে সরকারি কর্মী ও পরে ধাপে ধাপে দেশের সব নাগরিকের জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে।
কী আছে নতুন ‘ম্যাক্স’ অ্যাপে?
নতুন নিয়মানুযায়ী, ভবিষ্যতে রাশিয়ায় উৎপাদিত সব মোবাইল ফোনে এই অ্যাপটি প্রি-ইনস্টল করা থাকবে এবং ব্যবহারকারীরা এটি মুছে ফেলতে পারবেন না। ম্যাক্স অ্যাপকে ফোনের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন এবং লোকেশনের মতো সংবেদনশীল অনুমতিগুলি দেওয়ার পর সেই নিয়ন্ত্রণ আর প্রত্যাহার করা যাবে না। নির্মাণকারী সংস্থা ভিকে-এর দাবি, ম্যাক্স একটি ‘সুপার অ্যাপ’ যা মেসেজ আদানপ্রদান থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন, ফটো আপলোড এবং সরকারি পরিষেবা সবকিছুই এক প্ল্যাটফর্মে দেবে। এটি মার্কিন হোয়াটসঅ্যাপ এবং চীনা উইচ্যাটের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী।
নজরদারির আশঙ্কা
তবে এই অ্যাপ নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্রেমলিন নাগরিকদের স্বাধীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর খবরদারি চালাবে। অ্যাপটি বাধ্যতামূলক হওয়ার পর নাগরিকদের কথোপকথন আড়ি পেতে শোনা, মেসেজ পড়া এবং মত প্রকাশের উপর নজরদারি চালানো ক্রেমলিনের পক্ষে সহজ হবে। সরকার বিরোধী কোনো মতামত প্রকাশ করলে জরিমানার পাশাপাশি গ্রেপ্তারেরও ঝুঁকি থাকবে। ইতিমধ্যেই রাশিয়া সরকার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মালিক সংস্থা ‘মেটা’-কে ‘চরমপন্থী’ আখ্যা দিয়েছে এবং জনপ্রিয় হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটছে।
কেন এই অ্যাপ?
ইউক্রেন আগ্রাসনের পর রুশ সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক মহলে অসন্তোষ বাড়ছিল। প্রতিবাদের জমায়েতগুলির পরিকল্পনা বেশিরভাগই মেসেজিং অ্যাপগুলির মাধ্যমে করা হতো। মস্কো এমন একটি অ্যাপ চাইছিল, যার উপর তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। উল্লেখ্য, টেলিগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপগুলোর উপর রুশ সরকারের কোনো প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ নেই। ভিকে কোম্পানি, যারা এই অ্যাপটি তৈরি করেছে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা পাভেল ড্যুরভই টেলিগ্রামের স্রষ্টা। তিনি রুশ সরকারের কাছে ব্যবহারকারীর তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। বর্তমানে ভিকে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ রুশ সরকারের সিক্রেট সার্ভিসের হাতে।
আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই নতুন আইনের ফলে রুশ নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের সব তথ্য ক্রেমলিনের হাতে চলে আসবে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে।