SIR-ফর্ম বিভ্রাট, স্বামীর নাম বদল, ভুল তথ্য ও হয়রানির শিকার ৭০ বছরের বৃদ্ধা

দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিয়ে আসা কুলটি বিধানসভা কেন্দ্রের বরাকর এলাকার ডোমপাড়ার বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধা ছায়া বাদ্যকর SIR (Special Integrated Revision) প্রক্রিয়ায় চরম হয়রানির শিকার হলেন। ভুল এনুমারেশন ফর্ম পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক ও আসানসোলের মহকুমাশাসককে ই-মেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছেন বৃদ্ধার পরিবার।

ছায়া বাদ্যকরের নাতি বিকাশ বাদ্যকর বর্তমানে ঠাকুমার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

একই নামে দু’জন, তথ্য বিভ্রাট চরমে

খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, কুলটি বিধানসভার ১১১ নম্বর বুথে ২০০২ সালের তালিকাতেই ‘ছায়া বাদ্যকর’ নামে দু’জন ছিলেন। এই তথ্য বিভ্রাটই বর্তমান সমস্যার মূল কারণ।

  • ক্রমিক ২৮৪: স্বামীর নাম নারায়ণ বাদ্যকর। (এই বৃদ্ধা বর্তমান অভিযোগকারী)।

  • ক্রমিক ২৯২: স্বামীর নাম মথুর বাদ্যকর (প্রয়াত)। এই নামের পাশে EPIC নম্বর ছিল।

বর্তমানে বৃদ্ধা যে এনুমারেশন ফর্মটি বিএলও-র কাছ থেকে পেয়েছেন, সেটি অন্য এক ছায়া বাদ্যকরের। এতে নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকলেও, ভোটার কার্ডের নম্বর (আইইপি০৭৩০২০০) এবং ছবির সঙ্গে বৃদ্ধার মিল নেই।

ওয়েবসাইটেও ভুল, বুথও ভিন্ন

 

বৃদ্ধার পরিবারের লোক বিএলও-কে এই ভুল জানালেও তিনিও এর কারণ বুঝে উঠতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও দেখা যাচ্ছে চরম বিভ্রান্তি:

  • বৃদ্ধার ভোটার কার্ডের নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করলে নাম ছায়া বাদ্যকর দেখালেও স্বামীর নাম দেখাচ্ছে নারায়ণ বাদ্যকর (আসল নাম)।

  • কিন্তু সেখানে তাঁর পার্ট বা অংশ দেখাচ্ছে ৮৫ নম্বর (বুথ কুলটি হাইস্কুল) এবং ক্রমিক সংখ্যা ৪০৯।

  • অথচ বর্তমানে তিনি কুলটি বিধানসভার ১৯০ নম্বর পার্টের ভোটার (বুথ বেগুনিয়া হাইস্কুল), যেখানে তাঁর নাম রয়েছে ৫৫৩ ক্রমিক সংখ্যায় এবং সেখানেও তাঁর স্বামীর নাম নারায়ণ বাদ্যকর হয়ে গিয়েছে।

বৃদ্ধার নাতি বিকাশ বাদ্যকর জানিয়েছেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ৮৫ নম্বর পার্টে থাকা অন্য ছায়া বাদ্যকর ইতিমধ্যেই নিজের ফর্ম তুলে জমাও দিয়ে দিয়েছেন!

বৃদ্ধার আক্ষেপ: ‘কেন হয়রানির মধ্যে পড়তে হবে?’

 

নিজের ভোটার কার্ড ও ভোট দেওয়ার অধিকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমি বছরের পর বছর প্রতিটা নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। আমার ভোটার কার্ড অনেক পুরোনো। তা হলে কেন আমাকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হবে?” বলতে বলতে তাঁর চোখে জল চলে আসে।

বর্তমানে বৃদ্ধার পরিবার নির্বাচন কমিশনের কাছে দ্রুত এই ভুল সংশোধনের আর্জি জানিয়েছে, যাতে SIR প্রক্রিয়ায় তাঁর বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ না পড়ে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy