আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া, যা এসআইআর (SIR) নামে পরিচিত, সেই বিষয়ে দলের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে আজ এক বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিহারের পরে এই রাজ্যেও এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হতে চলেছে এবং এই তালিকা অনুসারেই আগামী বছর রাজ্যে ভোট গ্রহণ করা হবে। এই প্রেক্ষাপটে, প্রতিটি ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত বা বাদ দেওয়ার প্রস্তাবের ওপর কড়া নজরদারি রাখার কৌশল তৈরি করতে চাইছে শাসক দল।
আজকের এই বৈঠকে জেলা থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত তৃণমূলের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দলের সমস্ত স্তরের নেতাদের কাছে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেবেন অভিষেক। উল্লেখ্য, এই ইস্যুটি নিয়ে দলের চেয়ারপারসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বিকেলে সাংসদদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আগেই তাঁদের সতর্ক করেছেন। দল ইতিমধ্যে প্রতিটি বুথে এজেন্ট নিয়োগের কাজ শুরু করেছে এবং প্রাথমিক স্তরে জেলা, ব্লক ও অঞ্চল স্তরের নেতাদের কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ‘ত্রিস্তরীয় নজরদারি’র ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেছিলেন। আজকের বৈঠকে সাংসদ, বিধায়ক, পুরসভা ও পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি এবং জেলা ও ব্লক সভাপতিদের উপস্থিতিতে সেই প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্বের বিশ্বাস, ভোটার তালিকা সংশোধনে সাধারণ মানুষকে সহায়তা করার মাধ্যমে একাধারে নির্বাচনী জনসংযোগের কাজও সম্পন্ন হবে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সুযোগটিকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছে না দল। আজকের বৈঠকে প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় আসতে পারে, যা হলো বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর ভিন রাজ্যে ঘটে চলা হেনস্থা। সম্প্রতি তৃণমূল অভিযোগ তুলেছে যে, বাংলাভাষী হওয়ার কারণে বহু পরিযায়ী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে তাঁদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। এই ঘটনাকে ‘বাঙালি অস্মিতায় আঘাত’ হিসাবে দেখছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে রাজপথে নেমেছেন এবং প্রয়োজনে দিল্লি পর্যন্ত আন্দোলন নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আজকের বৈঠকে এই হেনস্থার প্রতিবাদে পঞ্চায়েত ও বুথ স্তরে কীভাবে আন্দোলন হবে, সে বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি, ভিন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর কোনো অত্যাচার হলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার এবং আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।