শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তৃণমূলের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে বৃহস্পতিবার আজীবনের জন্য সাসপেন্ড করল দল। বাবরি মসজিদের শিলান্যাস নিয়ে বিতর্কের জেরেই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। সাসপেনশনের খবর শুনেই প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন হুমায়ুন কবীর, কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তিনি কালই দল ছেড়ে দেবেন এবং বিধায়ক পদে ইস্তফা দেবেন।
বিদ্রোহী হুমায়ুনের পাল্টা আক্রমণ ও নতুন দলের ঘোষণা
দলের সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত শোনার পর ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর তৃণমূল নেতৃত্ব, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন:
-
ইস্তফা ও নতুন দল: তিনি বলেন, “কালকেই রিজাইন দিয়ে দেব। নতুন দল গড়ব। কাল অথবা আগামী সোমবার বিধায়ক পদে ইস্তফা দেব।” তিনি জানান, তিনি জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলে বহরমপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন।
-
তীব্র কটাক্ষ: তিনি বলেন, “এই RSS মার্কা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে আগামী দিনে কেউ BJP-র মুখ্যমন্ত্রী হলে স্বাগত জানাব।”
-
মসজিদ নিয়ে অনড়: তিনি প্রশ্ন তোলেন, “নিজের টাকায় মুসলিমদের জন্য একটা মসজিদ গড়তে বাধা কেন? যখন ক্লাবগুলোকে সরকার টাকা বিলোয়? উন্নয়নের নামে যখন তোলাবাজি চলে? বেশ করব মসজিদ গড়ব।”
-
২২ ডিসেম্বরে আত্মপ্রকাশ: তিনি জানান, তিনি একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল প্রস্তুত রেখেছেন, যার ৩১ জন সদস্য রয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর সেই দল আত্মপ্রকাশ করবে এবং বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল তৃণমূল এবং BJP উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়বে।
হুমায়ুন কবীর মনে করিয়ে দেন, এর আগেও ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে বিনা নোটিসে সাসপেন্ড করেছিলেন।
কেন আজীবন সাসপেন্ড করল তৃণমূল?
মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতেই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
-
দাদার মূল অভিযোগ: “ধর্ম নিয়ে যাঁরা বিভাজনের রাজনীতি করেন, তাঁদের সঙ্গে দল কোনও সম্পর্ক রাখবে না। ধর্ম নিয়ে ঘৃণার রাজনীতি তৃণমূল বরদাস্ত করবে না।”
-
বিজেপিকে সহায়তার অভিযোগ: ফিরহাদ দাবি করেন, “ওখানে বাবরি মসজিদ তৈরি হলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেকবার নির্বাচনের আগে BJP বিভাজনের রাজনীতি করতে তৃণমূলের একটা দু’টো গদ্দারকে নিয়ে গিয়ে এই কার্ড খেলে। BJP-র কথাতেই হুমায়ুন ভাই এই বিভাজনের রাজনীতি করছে।”
BJP-র প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলের সাসপেনশন প্রক্রিয়াকে ‘নাটক’ বলে অভিহিত করে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “এগুলো স্রেফ নাটক। যখন তিনি বলেছিলেন ওরা ৩০ শতাংশ আর আমরা ৭০ শতাংশ, যখন পারব কেটে ভাসিয়ে দেব। সেদিন কী করছিলেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাবরের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ শুধু নয়, ভারতের মানুষে ওখানে এমনটা হতে দেবে না।”