শহর এলাকার দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম প্রধান প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-আর্বান (PMAY-U) নিয়ে লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা প্রশ্নের লিখিত জবাবে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, সারা দেশে এবং বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে যখন এই প্রকল্পের অধীনে বিপুল সংখ্যক বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তখন কেন্দ্র কেন রাজ্যের ‘ন্যায্য পাওনা’ আটকে রেখেছে?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নাবলী:
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাউজিং ও আর্বান অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের (MoHUA) কাছে তিনটি মূল প্রশ্ন রেখেছিলেন:
১. PMAY-U প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে কতগুলো বাড়ি তৈরি হয়েছে এবং কতগুলোতে এখনও বসবাস শুরু হয়নি?
২. তৈরি হওয়া বাড়ি বিলি না হওয়া বা বসবাস শুরু না হওয়ার সংখ্যা ও তথ্য কি কেন্দ্রের কাছে আছে? এর কারণ কী?
৩. বাড়ি বিলি-বণ্টনে সমস্যা হলে কোনো সমীক্ষা বা অডিট করা হয়েছে কিনা এবং তার ফলাফল কী?
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর জবাব:
হাউজিং ও আর্বান অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী তোখন সাহু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত জবাবে জানিয়েছেন যে, ২০১৫ সালের জুনে শুরু হওয়া PMAY-U প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সারা দেশে উপভোক্তাদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করা। এই প্রকল্পের গুরুদায়িত্ব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির উপরেই ন্যস্ত। উপভোক্তা নির্বাচন, সুবিধা প্রদান, প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাড়ি বিলি-বণ্টনের পুরো কাজটি তারাই করে থাকে।
প্রকল্পের উপর কঠোর নজরদারি:
মন্ত্রী আরও জানান, এই প্রকল্পের উপর কঠোর নজরদারি রাখা হয়। উপভোক্তাদের জন্য বাড়ি তৈরির প্রতিটি পর্যায়ে জিয়ো-ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়। বাড়ির কাজের মান খতিয়ে দেখার জন্য থার্ড পার্টি কোয়ালিটি মনিটরিং বাধ্যতামূলক, যারা নির্মাণকাজের মান সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানায়। এছাড়াও স্বাধীন কোনো এজেন্সি দিয়ে প্রকল্পের কাজ ও বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে সোশ্যাল অডিট করানোও বাধ্যতামূলক।
কত বাড়ি তৈরি হয়েছে?
প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প শুরুর গোড়া থেকে চলতি বছরের ১৪ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ১১৯.২৬ লক্ষ বাড়ি অনুমোদন পেয়েছে (যার মধ্যে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় PMAY-U 2.0-এর সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত)। এর মধ্যে ১১২.৮১ লক্ষ বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে এবং ৯৩.৬১ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে বা উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের চিত্র:
একই সময়ে, পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের অধীনে ৬,১৫,১০৫টি বাড়ির অনুমোদন মিলেছে। এর মধ্যে ৬,০৫,৯৭১টি বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে এবং ৪,৬৫,৫৬১টি বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সম্পূর্ণ হওয়া বাড়িগুলির মধ্যে ৪,৬৪,৮৮১টিতে উপভোক্তারা বসবাস শুরু করেছেন।
অন্যান্য রাজ্যের তুলনামূলক চিত্র:
উত্তরপ্রদেশ: ১৯,৭৫,০৩৫টি বাড়ি অনুমোদিত, ১৭,৫৯,৭৭০টির কাজ শুরু, ১৭,০২,৩১৭টি সম্পূর্ণ, ১৬,৬৮,৩৮২টিতে বসবাস শুরু।
রাজস্থান: ৩,৩৩,৮১৫টি বাড়ি অনুমোদিত, ২,৯৪,৬৩৯টির কাজ শুরু, ২,৩৪,৬৯৮টি সম্পূর্ণ, ২,২৯,৩৬৩টিতে বসবাস শুরু।
গুজরাট: ৯,৯৩,৮৭৭টি বাড়ি অনুমোদিত, ৯,৭২,২০৮টির কাজ শুরু, ৯,৪১,৪১৯টি সম্পূর্ণ, ৯,০২,৬৮৪টিতে বসবাস শুরু।
কেরালা: ১,৬১,৯৫৭টি বাড়ি অনুমোদিত, ১,৫৫,১৬২টির কাজ শুরু, ১,৩৪,১২৭টি সম্পূর্ণ, ১,৩৪,০২৬টিতে বসবাস শুরু।
তৃণমূলের প্রশ্ন: প্রাপ্য কেন আটকে?
গ্রামীণ আবাস যোজনার প্রাপ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছে বলে তৃণমূল বারংবার অভিযোগ তুলেছে এবং দিল্লিতে গিয়েও বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এবার নগর আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পের অধীনে কাজের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে। এত সংখ্যক বাড়ি তৈরি এবং উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও কেন কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ মিলবে না, সেই প্রশ্ন আরও বড় হয়ে সামনে উঠে আসছে। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজ্যের ন্যায্য পাওনা আটকে রাখছে।