পুরোনো নোটের বান্ডিল বদলে বেশি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রায় সাত লক্ষ টাকা ছিনতাই করার অভিযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছিল তমলুকের রাধামণি রেল ব্রিজের কাছে। রবিবার ধৃতদের তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতরা হলো বুদ্ধদেব মণ্ডল, সুরজিৎ মণ্ডল, সত্যম বেরা, সৌরভ মণ্ডল এবং ভূদেব সামন্ত। এরা সবাই নারায়ণদাড়ি এবং ঠাকুরনগর এলাকার বাসিন্দা।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ২১শে জুলাই হুগলির শ্রীরামপুরের ঠিকাদার সন্তু মণ্ডল একটি উড়ো ফোন পান। তাকে বলা হয় যে হলদিয়া ও মান্দারমণিতে দুটি থ্রি-স্টার হোটেলের কাজ চলছে এবং তিনি যদি আগ্রহী হন তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন। প্রথমে সন্তু এই প্রস্তাবে গুরুত্ব না দিলেও পরে আগ্রহ দেখান। ২৫শে জুলাই তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের কালীনগরে পৌঁছান। সেখানে প্রতারকরা তাকে পুরোনো একশো টাকার নোটে ভরা একটি সুটকেস দেখায়, যার মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা ছিল বলে দাবি করা হয়। এরপর তারা সন্তুকে ১২ লক্ষ টাকা ৫০০ টাকার নোটে দিলে তাকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে নতুন একটি প্রস্তাব দেয়।
প্রথমে সন্তু রাজি না হলেও ২রা আগস্ট কলকাতার একটি হোটেলে তাদের মধ্যে আবারও বৈঠক হয়। সেখানে সন্তু ৭ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হন এবং প্রতারকরা তাকে টাকা নিয়ে তমলুকের রাধামণি রেল ব্রিজের কাছে আসতে বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৫ই আগস্ট সন্ধ্যায় সন্তু সাত লক্ষ টাকা নিয়ে সেখানে গেলে একটি গাড়ি থেকে কয়েকজন দুষ্কৃতী তাকে অস্ত্র দেখিয়ে টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।
সন্তু এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রটি গত কয়েক মাস ধরে খড়গপুর, বর্ধমান, হুগলি এমনকি দিল্লি থেকেও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে আসছিল। কখনও কম দামে সোনা বিক্রি, আবার কখনও হোটেলের কাজের টোপ দিয়ে তারা প্রতারণা করত। চণ্ডীপুর, নিমতৌড়ি, এবং কোলাঘাটের জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকাগুলো এই দুষ্কৃতীদের ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই এলাকায় ছিনতাই ও প্রতারণার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। গত ২৮শে জুলাই কোলাঘাটে দিঘার এক ব্যবসায়ীকে পণবন্দী করে টাকা হাতানোর চেষ্টা হয়। ২৯শে জুলাই কোলাঘাটের ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বর্ধমানের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে তিন লক্ষ টাকা ছিনতাই করার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা এখনও পলাতক। গত শনিবারও কোলাঘাট থানার কাছে এক ব্যবসায়ীর চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে ৫ লক্ষ টাকা ছিনতাই করা হয়। পুলিশের এই দ্রুত পদক্ষেপের কারণে এই চক্রের কিছু সদস্যকে ধরা সম্ভব হয়েছে।