পুজোর বাড়তি নিরাপত্তা, সিসিটিভি-র কড়া নজরদারি— সব দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবার নবমীর রাতে শিয়ালদহ-রানাঘাট মেন লাইনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন সোদপুর রেল স্টেশনের সাবওয়েতে শারীরিক হেনস্থা ও শ্লীলতাহানির শিকার হলেন এক তরুণী সাংবাদিক। শুধু তাই নয়, অভিযোগ জানাতে গিয়েও রেল পুলিশের (GRP) চরম উদাসীনতার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এই ঘটনায় পূর্ব রেলের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল।
ঠিক কী ঘটেছিল নবমীর রাতে?
গত বুধবার রাতে (নবমীর দিন) কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন ওই তরুণী সাংবাদিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি জানান, সোদপুর স্টেশনের সাবওয়েতে নামতেই কয়েকজন হিন্দিভাষী যুবক তাঁর পিছু নেয় এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকে। প্রতিবাদ করায় তারা আরও বেশি চড়াও হয়।
তরুণীর অভিযোগ, চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে সিঁড়িতে ওঠার সময় সেই যুবকদের মধ্যে একজন তাঁকে পিছন থেকে জাপটে ধরে!
তিনি দ্রুত ওই যুবকের কলার চেপে ধরে চড় মারতেই দলের অন্য যুবকেরা তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর ও শ্লীলতাহানি শুরু করে। ধস্তাধস্তিতে তাঁর জুতো ছিঁড়ে যায় এবং কানেও চোট লাগে। তরুণীর দাবি, সেই সময় সাবওয়েতে অনেক যাত্রী ও ঠাকুর দেখতে আসা মানুষজন থাকলেও তাঁর চিৎকার শুনে কেউ এগিয়ে আসেননি। এই সুযোগে যুবকের দলটি ভিড়ের মধ্যে মিশে পালিয়ে যায়।
জিআরপি-র বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ: ‘আপনি খুঁজে দিলে ধরব’
এই ঘটনার পরই তরুণী তাঁর বন্ধুদের ডেকে আনেন। এরপর তাঁরা প্ল্যাটফর্মে ডিউটিতে থাকা জিআরপি কর্মীর কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানে আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। কর্তব্যরত জিআরপি কর্মী উল্টে বলেন, “আপনি খুঁজে পেলে আমায় জানান, আমরা গিয়ে ধরব।”
তরুণী ও তাঁর বন্ধুরা লিখিত অভিযোগ জানাতে চাইলে তাঁদের কখনও দমদম, আবার কখনও বেলঘরিয়া স্টেশনে যেতে বলা হয়। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে শিয়ালদহ জিআরপি থেকে জানানো হয় পরদিন সকালে দমদমে গিয়ে অভিযোগ জানাতে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে দমদম জিআরপি থানায় ওই তরুণী সাংবাদিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই রেল পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়েছে। রেল পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।” একইসঙ্গে অভিযোগ দায়েরের সময় জিআরপি কর্মীদের উদাসীনতা নিয়ে যে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন ওই কর্তা।
উল্লেখ্য, এই বছর পুজোয় ৩০ হাজার বা তার বেশি যাত্রী ওঠানামা করে এমন প্রায় ৪০০টি রেল স্টেশনে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পূর্ব রেল। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন ও সিসিটিভি নজরদারিও বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এত ব্যবস্থার মধ্যেও সোদপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের সাবওয়েতে এমন ঘটনায় যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।