‘গল্প হলেও সত্যি’ সিনেমার সেই সর্বগুণসম্পন্ন ধনঞ্জয়কে মনে আছে? যিনি হাসি মুখে “যা হোক দেবেন বাবু” বলে সব কাজ করতেন। তবে সে দিন এখন অতীত। বর্তমানে মুম্বইয়ের রাঁধুনিরা শুধুমাত্র রান্নার জন্যই যে বেতন নিচ্ছেন, তা অনেক কর্পোরেট চাকরির বেতনকেও হার মানাচ্ছে। সম্প্রতি আয়ুশি দোশি নামের এক এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারীর পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর এই বিষয়টি নিয়ে নেটদুনিয়ায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
আয়ুশি দোশি তাঁর পোস্টে বাড়ির রাঁধুনিকে ‘মহারাজ’ সম্বোধন করে লিখেছেন, “আধ ঘণ্টার জন্য মহারাজ আমাদের বাড়িতে আসেন। রান্না করেন। মাস গেলে বেতন নেন ১৮ হাজার টাকা। ১০ থেকে ১২টি বাড়িতে রান্না করেন তিনি।” তাঁর এই পোস্ট দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং রাঁধুনির মাসিক রোজগার নিয়ে নেটদুনিয়ায় বিতর্কের ঝড় তোলে।
নেটিজেনদের একাংশ ১৮ হাজার টাকাকে ‘বড্ড বেশি’ বলে দাবি করলেও, আয়ুশি তা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, এই টাকাটা পুষিয়ে যায়, কারণ তাঁর মহারাজ রান্নায় সত্যিই দড়। একেবারে ধনঞ্জয়ের মতোই। আয়ুশি জানান, তাঁর রাঁধুনির হাতের কাঁচকলার কোপ্তা খেলে মাংসের মতো মনে হবে। মুম্বই দেশের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর, এবং কিছু অভিজাত এলাকায় রাঁধুনিরা এমনই ‘চার্জ’ করে থাকেন।
আয়ুশির কথায়, “অবশ্য সব রাঁধুনিরা এমন নন। অনেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকাও নেন। কিন্তু কেউ যদি সত্যিই দক্ষ হন, নিজের কাজ দ্রুত শেষ করতে পারেন, তাহলে এমন চার্জ হাঁকাতে অসুবিধা কোথায়।” হিসেব বলছে, যদি একজন রাঁধুনি প্রতিদিন ১০-১২টি বাড়িতে আধ ঘণ্টা করে রান্না করেন এবং প্রতিটি বাড়ি থেকে ১৮ হাজার টাকা নেন, তাহলে মাস শেষে তাঁর আয় ১.৮ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যা অনেক ‘হোয়াইট কলার জব’-এর বেতনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “মাস্টারশেফ নাকি!” আবার কেউ খোঁচা দিয়ে লিখেছেন, “আধঘণ্টায় রান্না শেষ। রাঁধুনি না এআই!” তবে আয়ুশি এসব সমালোচনায় কান দিচ্ছেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “কত রোজগার সেটা বড় কথা নয়। বড় ডিগ্রি, দীর্ঘদিন কর্পোরেটে চাকরি করার পরেও অনেকে এই টাকা বেতন পান না। পেলেও ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সেটাও সম্ভব। তার জন্য দক্ষ হতে হবে।”
সত্যিই, মুম্বইয়ের এই ‘মহারাজ’ রাঁধুনিরা অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন। এ যুগের ধনঞ্জয়রা দক্ষতা আর পেশাদারিত্বের জোরে কর্পোরেটদের দশ গোল দিচ্ছেন, যা প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতা থাকলে কোনো পেশাই ছোট নয় এবং তার যথার্থ মূল্য অবশ্যই পাওয়া যায়।