LOC-তে ২০০০ কিমি দীর্ঘ রেল প্রকল্প চিনের, আকসাই চিন ও ডোকলামে বাড়ছে উত্তেজনা

চিন তিব্বত ও জিনজিয়াং প্রদেশকে সংযুক্ত করার জন্য প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মেগা রেল প্রকল্প শুরু করেছে। এই নতুন রেলপথটি ভারতের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC)-এর অত্যন্ত কাছাকাছি যাবে এবং বিতর্কিত আকসাই চিন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করবে। এটি নেপালের সীমান্ত এবং ২০১৭ সালের ডোকলাম সংঘাতের কেন্দ্রস্থল সংবেদনশীল চাম্বি উপত্যকায় পৌঁছানোর কারণে ভারতের জন্য কৌশলগত উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

প্রকল্পের বিস্তারিত এবং চ্যালেঞ্জ:

চিনের জিনজিয়াং-তিব্বত রেলওয়ে কোম্পানি (XTRC) এই বিশাল প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করছে। এটি শিগাতসে থেকে শুরু হয়ে নেপালের সীমান্ত বরাবর এগিয়ে আকসাই চিন হয়ে জিনজিয়াংয়ের হোতানে পৌঁছাবে। এই রেল প্রকল্পের গড় উচ্চতা ৪,৫০০ মিটারের বেশি হওয়ায় নির্মাণকাজে পার্মাফ্রস্ট, হিমবাহ এবং হিমায়িত নদীর মতো প্রাকৃতিক বাধা মোকাবিলা করতে হবে। চিনের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে লাসাকে কেন্দ্র করে ৫,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।

ভারতের জন্য কৌশলগত উদ্বেগ:

১. আকসাই চিন বিরোধ: আকসাই চিন অঞ্চলটি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও ১৯৫০-এর দশক থেকে এটি চিনের দখলে রয়েছে। ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল এখানকার জিনজিয়াং-তিব্বত হাইওয়ে নির্মাণ। নতুন এই রেলপথও একই বিতর্কিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাবে, যা ভারতের জন্য একটি বড় কৌশলগত ঝুঁকি।

২. সীমান্ত নিরাপত্তা: এই রেললাইন চালু হলে চিন খুব দ্রুত সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম সীমান্তে পাঠাতে সক্ষম হবে। এর ফলে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের মতো সংবেদনশীল এলাকায় সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। চিন ইতোমধ্যে লাসা-নিংচি রুটটি চেংডু পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যা অরুণাচল সীমান্তের কাছে একটি বড় সামরিক কেন্দ্র।

৩. ডোকলাম এবং নেপালের সীমান্ত: নতুন রেলপথ নেপাল-তিব্বত সীমান্তের গিরং এবং চাম্বি উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছাবে। চাম্বি উপত্যকাই ২০১৭ সালের ডোকলাম বিরোধের কেন্দ্রস্থল ছিল, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি সংবেদনশীল এলাকা।

ভারতের প্রস্তুতি:

যদিও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে সীমান্ত অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগ বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, চিনের এই রেল প্রকল্প শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং ভারতের ওপর একটি কৌশলগত ও সামরিক চাপ সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের উচিত সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই ইস্যুটিকে তুলে ধরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy