ISL-এ চরম আর্থিক সঙ্কট, ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সমাধান না হলে কড়া পদক্ষেপ, AIFF-কে সংবিধান বদলানোর দাবি ক্লাবগুলির

ভারতের শীর্ষ স্তরের ফুটবল প্রতিযোগিতা ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) এই মুহূর্তে এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখে। ইস্টবেঙ্গল ছাড়া প্রায় সকল ISL ক্লাব যৌথভাবে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)-এর কাছে একটি গুরুতর আবেদন জানিয়েছে। তাদের দাবি, স্থগিত থাকা ২০২৫-২৬ মরসুমের নতুন টেন্ডার ফ্লোট করার আগেই AIFF-কে তার নতুন সংবিধানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।

আগামী ৮ ডিসেম্বর FSDL (Reliance-subsidiary)-এর সঙ্গে AIFF-এর ১৫ বছরের মাস্টার রাইটস চুক্তি শেষ হতে চলেছে। এই সময়সীমার মাত্র তিন দিন বাকি থাকতেও, ক্লাবগুলি চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছে। কারণ, তাদের আয়ের প্রধান উৎস এখন বন্ধের মুখে।

💰 প্রধান আয়ের উৎস বন্ধ: সঙ্কটে ফুটবল ক্লাবগুলি

২০১৪ সালে ISL প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্লাবগুলির আয়ের একটি বড় অংশ আসে FSDL-এর কেন্দ্রীয় রাজস্ব ভাগাভাগি পুল (Central Pool) থেকে। কিন্তু সম্প্রতি টেন্ডার প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার কারণে সেই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলস্বরূপ, বহু ক্লাব তাদের কর্মীদের বেতন বন্ধ করেছে এবং অপারেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।

যদিও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া লিগ আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন, তবুও ক্লাবগুলি মনে করছে তারা এক “অসহনীয়” পরিস্থিতিতে রয়েছে। ক্লাবগুলির স্পষ্ট বক্তব্য, ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে AIFF যদি সুপ্রিম কোর্টকে “সমাধানের পথ” (“remedial pathway”) সম্পর্কে অবহিত না করে, তবে তাদের চরম সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

📜 সংবিধান বদলের দাবি: রাও ও কেপিএমজি রিপোর্টকে হাতিয়ার

ক্লাবগুলি AIFF সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে লেখা চিঠিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, সংবিধানের পরিবর্তন এখন AIFF-এর ক্ষমতাধীন। তারা উল্লেখ করেছে যে বিচারপতি এলএন রাও-এর দরপত্র-মূল্যায়ন রিপোর্ট এবং লেনদেন উপদেষ্টা কেপিএমজি-এর পর্যবেক্ষণেই “সাংবিধানিক ও বাণিজ্যিক বাধা” (Constitutional and commercial constraints) তুলে ধরা হয়েছিল, যা মালিকানা, অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ এবং অবনমন (Promotion and Relegation)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করেছে।

মোহনবাগান সহ ক্লাবগুলির দাবি:

  1. AIFF-এর ক্ষমতা প্রয়োগ: ১২ অক্টোবর নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ায়, বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত করা ধারাগুলি বাতিল করতে AIFF-এর সরাসরি ক্ষমতা রয়েছে। আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা না করে জরুরি ভিত্তিতে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত।

  2. নতুন টেন্ডারের শর্ত: সাংবিধানিক বাধাগুলি দূর না হওয়া পর্যন্ত নতুন দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না।

  3. সময়সীমা: নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া এই ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই কঠোর সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

🤝 ক্লাবগুলির নিজস্ব Consortium গঠনের প্রস্তাব

বুধবার নয়াদিল্লিতে ক্রীড়া মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকে ISL এবং আই-লিগের ক্লাবগুলি একাধিক প্রস্তাব পেশ করে। ইস্টবেঙ্গল আর্থিক সংকটে থাকা AIFF-কে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিলেও, অন্যান্য ক্লাবগুলি তা খারিজ করে দেয়। তাদের মতে, এটি “মারাত্মক আঘাতের ওপর ব্যান্ডেজ লাগানোর” মতো একটি অস্থায়ী সমাধান।

দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য ক্লাবগুলির নজিরবিহীন প্রস্তাব হলো:

“যদি সংশোধিত টেন্ডার উপযুক্ত বাণিজ্যিক অংশীদার খুঁজে না পায়, তবে ISL ক্লাবগুলি সম্মিলিতভাবে একটি কনসোর্টিয়াম (Consortium) গঠন করে AIFF এবং বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে লিগের মালিকানা ও পরিচালনার ভার নিতে পারে।”

ক্লাবগুলি মনে করে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় লিগগুলির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এই পদ্ধতি ভারতীয় ফুটবলের প্রতি তাদের দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারকে তুলে ধরবে।

🤷‍♂️ AIFF-এর প্রতিক্রিয়া

ক্লাবগুলির এই আবেদন নিয়ে AIFF-এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এম সত্যনারায়ণ জানান, ক্লাবগুলির চিঠির প্রথম অংশটি মন্ত্রকের উদ্বেগের বিষয়। তবে তিনি আশ্বাস দেন, AIFF সংবিধান অনুযায়ী ISL-এর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই মডেল নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, কেপিএমজিকে সময়সীমার কথা মাথায় রেখে পুনঃ-টেন্ডার জারির সম্ভাবনাসহ একটি উপযুক্ত সমাধানের জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy