মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার কারণ দেখিয়ে ভারতীয় পণ্যের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের জেরে যখন ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক উত্তপ্ত, ঠিক তখনই ভারতের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে এল।
ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সফরে থাকাকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের কাছে এফ-৩৫ বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেন। ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার ক্ষেত্রে এফ-৩৫ চুক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তবে ভারত যুদ্ধবিমান কেনার চেয়ে যৌথ ডিজাইন ও দেশীয় উৎপাদনের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মার্কিন-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কে ক্রমেই বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় পণ্যের উপর ট্রাম্পের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে মোদী সরকার পাল্টা পদক্ষেপের পথে না হেঁটে, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কথা জানিয়েছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির অন্যান্য উপায়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যার মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, সোনা এবং যোগাযোগ সরঞ্জাম আমদানি বৃদ্ধির বিষয়টিও রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে ভারত সরকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।
বিশ্বের অন্যতম উন্নত যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে এফ-৩৫ অন্যতম। আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরেই চেয়েছিল যে ভারত এই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কিনুক, যাতে এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। তবে ভারত মনে করছে, বিপুল অর্থ খরচ করে মার্কিন যুদ্ধবিমান কিনলে সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ ধাক্কা খাবে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি স্বনির্ভরতা এবং স্বদেশীকরণের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতের যে কোনও সামরিক সহযোগিতায় প্রযুক্তি ভাগাভাগি এবং উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
ভারত নিজস্ব স্বদেশী এএমসিএ (অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট) পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করছে। তবে এটি তৈরি হয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। আমেরিকা ছাড়াও রাশিয়া তাদের এসইউ-৫৭ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ভারতকে অফার করেছে। অনেক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, ভারতের বিমান বাহিনীর হাতে এএমসিএ আসার আগে পর্যন্ত শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সীমিত পরিমাণে কোনো দেশ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনা উচিত। ভারতের এই সিদ্ধান্ত ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার প্রতি সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন।