ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) উৎপাদনকে গতি দিতে কেন্দ্র সরকার ‘স্কিম টু প্রোমোট ম্যানুফ্যাকচারিং অব ইলেকট্রিক প্যাসেঞ্জার কারস ইন ইন্ডিয়া’ বা এসপিএমইপিসিআই (SPMEPCI) নামে যে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প চালু করেছিল, তাতে এখনো পর্যন্ত একটিও আবেদন জমা পড়েনি। বুধবার সংসদে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই তথ্য স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, যা দেশের শিল্পমহলের জন্য উদ্বেগের কারণ।
আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২১ অক্টোবর। মন্ত্রক জানিয়েছে, বিশ্বের একাধিক বড় গাড়ি নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো সংস্থাই এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেনি।
আবেদন না করার মূল কারণগুলি
কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের বক্তব্য অনুসারে, আন্তর্জাতিক ইভি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির অনীহার পেছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
-
EU-ভারত বাণিজ্য চুক্তির অপেক্ষা: সবচেয়ে বড় কারণ হলো ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নির্মাতারা মনে করছেন, এই চুক্তির ফলাফল কী হবে, তার ওপরই তাদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ এবং ভারতে উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নির্ভর করছে। ফলে চুক্তি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
-
বিরল খনিজ চুম্বকের বিধিনিষেধ: বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটরে ব্যবহৃত বিরল খনিজ চুম্বকের (রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট) ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নিয়ে আপত্তি উঠেছে। নির্মাতাদের আশঙ্কা, এই চুম্বক ছাড়া উচ্চক্ষমতার ইভি মোটর তৈরি কঠিন। এই বিধিনিষেধের কারণে প্রকল্পের নির্ধারিত ডোমেস্টিক ভ্যালু অ্যাডিশন (ডিভিএ)-র ৫০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে।
-
কঠিন শর্তাবলী: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির দাবি, প্রকল্পে অংশ নিতে হলে ন্যূনতম ৪,১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের শর্ত এবং মাত্র তিন বছরের মধ্যে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা মেনে চলা কঠিন।
-
সরবরাহ শৃঙ্খলের অনিশ্চয়তা: আন্তর্জাতিক বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে তৈরি অনিশ্চয়তাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রকল্পের সুবিধা কী ছিল?
চলতি বছরের মার্চে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মূল সুবিধা ছিল:
-
নির্বাচিত সংস্থাগুলিকে পাঁচ বছরের জন্য খুব কম— মাত্র ১৫ শতাংশ শুল্কে— নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে।
-
শর্ত ছিল, ভারতে উৎপাদন শুরু করে ধীরে ধীরে পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ ডোমেস্টিক ভ্যালু অ্যাডিশন নিশ্চিত করতে হবে।
-
আমদানি শুল্কে যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তার সমতুল অর্থ বা প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের জন্য ব্যাঙ্ক গ্যারান্টিও জমা দিতে হবে সংস্থাগুলিকে।
ভারী শিল্প মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা বিদেশি দূতাবাস, ইনভেস্ট ইন্ডিয়া এবং রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তবে এখনই প্রকল্পের শর্ত সংশোধন বা আবেদন জমার সময়সীমা বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন নেই বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।