পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে যুক্ত বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে রাজ্যসভায় মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি এবং রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বকে আঘাত করছে এবং রাজ্যে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি করছে।
নোটিসে শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ
রাজ্যসভায় জমা দেওয়া নোটিসে শমীক ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে বিএলও-রা শুধু রাজ্য সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানতে নয়। শমীক বলেন, “এটা নির্বাচন কমিশনের মতো স্বশাসিত সংস্থার সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসনের উপর সরাসরি আঘাত।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরির এই বিরোধিতা যথেষ্ট সন্দেহজনক এবং এর মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভোটব্যাংক নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। তার মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই বিপন্ন করছে না, বরং জাতীয় নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য
দিন কয়েক আগে বীরভূমের বোলপুরে একটি প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিএলও-দের উদ্দেশে বলেছিলেন, “ভোটার লিস্টটা দেখবেন, মানুষকে যেন হেনস্থা করা না হয়।” তিনি আরও বলেন, “কোনো নির্দেশ এলে মুখ্যসচিবকে জানাবেন। আমাদের না জানিয়ে হুটপাট সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন। কখনও এই জিনিস হয়নি। ভয় দেখালেই আপনারা ভয় পাবেন! তাহলে ঘরে বসে থাকুন।” তিনি জেলাশাসকদেরও সতর্ক করে বলেন যে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক হাজার লোককে দিল্লিতে ট্রেনিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।
তৃণমূল ও বিজেপি-র প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রত্যেক রাজ্যের বিএলও-দের ডাকার অধিকার নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ আলাদা নয়। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী কেন বিএলও-দের হুমকি দেবেন?”
অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অন্য রাজ্যের ভোটার এখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা নিয়ে প্রথম সরব কে হয়েছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছেন। ভোটার তালিকা নিখুঁত রাখতে হবে, বৈধ ভোটার রাখতে হবে এবং অন্য রাজ্য থেকে ভোটার আনা যাবে না— এই কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেও বলেছেন।” তিনি আরও বলেন যে, তৃণমূল কংগ্রেসই প্রথম কলকাতা ও দিল্লি নির্বাচন কমিশনের কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়েছে এই বিষয়ে।
এই বিতর্ক এখন জাতীয় রাজনীতিতেও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।